দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজধানী ঢাকায় এসে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কাস্টমাইজেশন দেখে গেলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীর প্রতিনিধিরা।
প্রার্থীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বেজমেন্টে ইভিএম কাস্টমাইজেশন সেন্টারে এই আয়োজন করা হয়। যে ভোট দেবেন এবং যাকে ভোট দেয়া হবে সেই তথ্য সংযুক্ত করাই হলো কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়া।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে ৩৪ জন প্রতিনিধির আসার কথা ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত ২১ জন প্রার্থীর প্রতিনিধি উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে যোগ দেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিনিধি মোখলেসুর রহমান।
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন প্রার্থীদের প্রতিনিধির কাছে বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন।
আগামী ১৫ জুন কুমিল্লায় পুরোপুরি ইভিএমে ভোট হবে। এই যন্ত্র ব্যবহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আপত্তি না থাকলেও স্বতন্ত্র পরিচয়ে দাঁড়ানো বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা ব্যালটে ভোট নেয়ার দাবি করছেন। তাদের দাবি, ইভিএমে কারচুপি করা যায়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রার্থীদের সামনে এই ভোটিং মেশিন তুলে ধরে সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রতিনিধি এ কে এম মহিতুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোটের এক ঘণ্টা আগে যদি মেশিন টেস্ট করে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় মেশিন ভালো পারফর্ম করে, তাহলে আমাদের কোনো টেনশন নাই।’
পোলিং এজেন্টদের স্বচ্ছতার ওপর ইভিএম মেশিনের স্বচ্ছতা নির্ভর করছে বলে মনে করেন তিনি। সফটওয়ার হ্যাক করা যায় মন্তব্য করে কুমিল্লার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেনের প্রতিনিধি রাসেল মিয়া বলেন,
‘কানাডা, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা আমাদের থেকে প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে তাও তারা কেন ব্যবহার করছে না। আমাদের কেন ইভিএমের প্রতি এত ঝোঁক।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই যন্ত্র নিয়ে বেশ আগ্রহী হলেও রাজনীতিতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা এই যন্ত্রের বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এই যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। পরের বছর হয় প্রথম নির্বাচন হয়। এরপর ২০১৭ সালে এসে এ সিটিতে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিন গুণ। এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা। বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে।
দুটি নির্বাচনেই কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি ভোটেই জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। তার দল এবার ভোট বর্জন করায় গত দুবারের মেয়র এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের প্রচারে নেমেছেন। সাক্কুর বিরোধিতা করে মাঠে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার।
আওয়ামী লীগ এখানে পরপর তিনটি নির্বাচনে নতুন মুখ দিয়ে জয়ের চেষ্টায় আছে। প্রথম নির্বাচনে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা আফজল খানকে দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরের বার তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাও পেরে ওঠেননি। এবার নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে।