ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট হলেও ভোটারদের স্বাধীন মতো ভোট দিতে পারার চ্যালেঞ্জ কী, সেটি উঠে এল একজন নির্বাচন কমিশনারের বয়ানে।
কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভোট দিতে যে গোপন কক্ষ থাকে, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে ভোটারদের প্রভাবিত করা হয়। তার ভাষ্যে এরা ডাকাত এবং সেই ডাকাতই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ব্যালটের ভোটের ক্ষেত্রে একজনের কাগজ অন্যের জোর করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটেছে। তবে ইভিএমে একজন ভোটারের আঙ্গুলের ছাপে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয় বলে একজনের ভোট অন্যের দেয়া সম্ভব নয়।
তবে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গোপন কক্ষে থাকা ইভিএম মেশিনে বোতাম টিপে ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে। এমনও দেখা গেছে, গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে দেখিয়ে দেয়ার নাম করে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। এটি প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা করে থাকেন।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান এই বিষয়টি উল্লেখ করেই বলেন, ‘ইভিএমের মধ্যে চ্যালেঞ্জ একটাই; আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না। একটা ডাকাত, সন্ত্রাসী গোপন কক্ষে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে। বলে, আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান। দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ।’
আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে যে ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে সব কেন্দ্রেই ব্যবহার করা হবে ইভিএম। সেখানে গোপন বুথ বাদে সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরাও থাকবে। ফলে কেন্দ্রের ভেতরে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ উপস্থিত থাকতে পারবে না বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
কুমিল্লায় ভোটাররা স্বাধীনভাবে প্রার্থী বাছাই করতে পারবে নিশ্চিত করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা থাকবে; সাংবাদিকদের এলাউ করা হবে। ভেতরে কারও ঢোকার ছবি যদি দেন, সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে।’
নির্বাচনে কোনো ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো দুর্বলতা নাই, কোনো চাপ নাই। আমরা টোটাল স্বাধীন। স্বাধীনভাবে কাজ করব দেখবেন। আমি কথা কম বলতে চাই।’
এর আগে কুমিল্লার প্রার্থী এবং প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের ইভিএম কাস্টমাইজেশন দেখানো হয়। কাস্টমাইজেশন হল এমন প্রক্রিয়া যে ভোট দেবেন এবং যাকে ভোট দেয়া হবে সেই তথ্য সংযুক্ত করা।
২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই যন্ত্র নিয়ে বেশ আগ্রহী হলেও রাজনীতিতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা এই যন্ত্রের বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এই যন্ত্র দিয়ে দূর থেকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা চলছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আলমগীর।
কুমিল্লার প্রার্থীদের কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে আহসান হাবিব বলেন, ‘তাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছি।’
আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব সকল প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করার।
আঙ্গুলের ছাপ না মিললে বা আঙ্গুল কেটে গেলে প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ভোটার শনাক্তের এক শতাংশ ক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ভিডিও কল দিয়ে দেখা হবে এ রকম কয়জন রয়েছে। যার ভোট সে দেবে যাকে খুশি তাকে দেবে।’