বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনায় নতুন জাতের বরই, অসময়ে হবে ফল

  •    
  • ৩০ মে, ২০২২ ১৪:৩৯

বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বরই রসে টইটম্বুর ও খেতে বেশ সুস্বাদু। গাছ থেকে বরইগুলো তোলার পর মাঝারি ও ছোটগুলো বড় হয়ে পাকতে থাকে। এভাবে প্রতিটি গাছে তিন মাস পর্যন্ত বরই উৎপাদন করা যাবে।’

অসময়ে পেকে যাওয়া বীজ ছোট ও মাংসল টক-মিষ্টি বরইয়ের নতুন জাতটি ছড়িয়ে দিতে জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিনা। এই জাতের নাম দেয়া হয়েছে বিনাবরই-১। এর আগে দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণায় সাফল্য পান বিজ্ঞানীরা৷

নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাতটির প্রধান গবেষক ও উদ্ভাবক বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুল আলম মিঠু।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশে অসময়ে বরই ধরবে এমন জাত উদ্ভাবন করা। কারণ, সব বরই যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন বাজারে ভালো মানের বরই পাওয়া গেলে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করবেন। এতে বিক্রেতাসহ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ব্যক্তিরাও লাভবান হবেন। এ জন্য দেরিতে ফল ধরে ভারতের এমন একটি জাতকে চিহ্নিত করে ২০১৫ সাল থেকে পুরোদমে গবেষণা শুরু করি।’

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুল আলম মিঠু জানান, ২০১৯ সালের শেষ দিকে গবেষণায় সাফল্য আসে। পরে পরীক্ষামূলকভাবে ২০২০ সালে এক বছর বয়সী একটি গাছ থেকে দুই কেজি বরই উৎপাদন করা হয়। আর দুই বছর বয়সে এই গাছ থেকেই গত বছরের ২৮ এপ্রিলের পর ৪০ কেজি বরই পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, এভাবে সময়ের ব্যবধানে একেকটি গাছ থেকে বছরে ৩০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া যায়- দেশীয় গাছগুলো যত বছর বেঁচে থাকে, এটিও ঠিক তত বছরই বেঁচে থাকবে। এ জন্য চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে বিনাবরই-১ নাম দিয়ে জাতীয় বীজ বোর্ডে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়।

এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘এপ্রিলের শেষের দিকে ছাড়পত্র দেয়া হয়৷ জাতটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের আওতায় আনতে আর বাধা রইল না৷’

এ জন্য নতুন জাতটি ছড়িয়ে দিতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা দেশে চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এই জাতটির উদ্ভাবক ড. শামসুল আলম মিঠুর সহযোগী গবেষক ছিলেন নাজমুল হাসান মেহেদী।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, বাজারে যে বরইগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো মার্চ-এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। নতুন জাতটি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে লাগানো হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুল আসবে এবং মার্চ-এপ্রিলে ফল তোলা শুরু হবে। আর যদি মার্চ-এপ্রিলে লাগানো হয়, তাহলে এপ্রিল-মে মাসে ফল তোলা যাবে।

তিন-চারটি ধাপে এই গাছে বরই ধরে। এ ছাড়া এই বরইয়ের একেকটি বীজের ওজন গড়ে ২ গ্রাম, যা অন্য জাতের চেয়ে খুব ছোট। আর বরইগুলোর ওজন হবে গড়ে ৭৪ গ্রাম। পাকার সময় এগুলো হলদে ও সোনালি রঙের হবে।

প্রতিদিন মেয়েদের ৭৫ ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। ভিটামিন সি শরীরে জমা না থাকার কারণে প্রতিদিন খেতে হয়। উদ্ভাবিত নতুন জাতের এই বরইয়ের প্রতি গ্রামে ৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বরইটি রসে টইটম্বুর ও খেতে বেশ সুস্বাদু। গাছ থেকে বড়গুলো তোলার পর মাঝারি ও ছোটগুলো বড় হয়ে পাকতে থাকে। এভাবে প্রতিটি গাছে তিন মাস পর্যন্ত বরই উৎপাদন করা যাবে।

‘এ ছাড়া এর তেমন কোনো রোগবালাই নেই। তবু ফুল আসার আগে একবার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভালো। ফুল হওয়ার পর হরমোন জাতীয় প্লানোপিক্স, প্লানোটন বা প্রোরা জাতীয় হরমোন প্রয়োগ করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে প্রথমে ব্যাপক চারা উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা অল্প মূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে চারা বিতরণ করব। বাণিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহীদের জন্য প্রয়োজনে জাতটির প্রদর্শনী দেয়া হবে। সুস্বাদু এ বরই ব্যাপক উৎপাদনের লক্ষ্যে সারা দেশে গাছের চারা ছড়িয়ে দিতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর