বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পলেস্তারা খসে পড়ছে অর্ধশতাব্দীর লাইব্রেরির

  •    
  • ৩০ মে, ২০২২ ১৩:৫৭

লাইব্রেরিটির ভবন বেশ দুর্বল। ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ভেঙ্গে গেছে দরজা-জানালাও। বৃষ্টির মাত্রা বেশি হলে ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বইয়ের সেলফগুলো। সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগার এমন দশায় দিন দিন পাঠক প্রিয়তা হারাচ্ছে।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, ওমর খৈয়ামের একটি কবিতার ভাবানুবাদ করেছিলেন এভাবে, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা, যদি তেমন বই হয়’। এর মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে বইয়ের গুরুত্ব।

কাগজ-কালি-বাঁধাইয়ের মাধ্যমে যে বই আমাদের দৃশ্যগোচর হয়; আমরা হাতে ধরি, পড়ি; তা সংরক্ষণেরও গুরুত্ব আছে। না হলে নষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকে।

যত্নের অভাবে বই নষ্ট হওয়ার প্রমাণ মিলেছে খুলনার বিভাগীয় সরকারি গণ-গ্রন্থাগারে।

খুলনা সদরের অন্যতম প্রধান সড়ক লোয়ার যশোর রোডের পশ্চিম পাশের দ্বিতল ভবনে এ গ্রন্থাগার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনটিও বেশ দুর্বল। ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ভেঙ্গে গেছে দরজা-জানালাও। বৃষ্টির মাত্রা বেশি হলে ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বইয়ের সেলফগুলো। সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগার এমন দশায় দিন দিন পাঠক প্রিয়তা হারাচ্ছে।

লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৯৬৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরির মর্যাদা পায় এটি। এর আয়তন ৩১ হাজার বর্গফুট। এখানে সংরক্ষিত তালিকায় (ক্যাটালগ) বইয়ের সংখ্যা এক লাখ পঁচিশ হাজার। এর মধ্যে বাংলা ৮৭ হাজার ও ইংরেজি ৩৮ হাজার বই থাকার কথা থাকলেও ১৪ হাজারের কোনো হদিস নেই। এ ছাড়া আট হাজার বই সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেগুলো কোনোভাবেই সংরক্ষণের সুযোগ নেই।

রোববার গ্রন্থাগারটি ঘুরে দেখা যায়, অনেক বই টেবিলের উপর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত বইয়ের স্তূপের উপর ধুলোর পুরু স্তর পড়েছে। কয়েক’শ বইয়ের পেজ ছেঁড়া, অনেক বইয়ের লেখা প্রায় বিবর্ণ।

এ সময় গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, গ্রন্থাগারটি দেখভালের জন্য ২৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে ১৩টি পদ-ই বর্তমানে শূন্য। ডিজিটাল সময়েও এখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। স্ক্যানার ও ফটোকপি মেশিনগুলোও অকার্যকর। তাই সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা খুবই কম বলে জানান তারা।

পাঠক সংখ্যার তালিকায় দেখা গেছে, গড়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে মাত্র সাত জন পাঠক আসেন। যারা আসেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই চাকরিপ্রত্যাশী। গ্রন্থাগারটিতে ২১০ জন নিবন্ধিত সদস্য রয়েছেন, যারা বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারেন। তবে বাস্তবে এ সংখ্যাও কম।

এ বিষয়ে প্রধান গ্রন্থাগারিক ও উপপরিচালক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ পাঠকের চাহিদার বিষয়টি দেখে চাকরির পরীক্ষার উপযোগী বই এখানে রেখেছে। না হলে আমরা পাঠক হারাব। চাকরিপ্রার্থীরাই বর্তমানে গ্রন্থাগারটির প্রধান সুবিধাভোগী।’

এ সময় কথা হয় পাঠক এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি দৌলতপুর সরকারি ব্রজলাল কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে চাকরিসহায়ক সব বই কেনা সম্ভব নয়। তাই বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন এখানে জব গাইড পড়তে আসি।’

গন্থাগারটির পাশেই শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল কাদিরের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘গ্রন্থাগারটির ভবনটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এটি রক্ষায় দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। পাঠক সংখ্যা বাড়াতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই রাখতে হবে, না হলে পাঠক সংখ্যা আরও কমে যাবে।’

প্রধান গ্রন্থাগারিক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘গ্রন্থাগারের সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পুরনো ভবন ভেঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত নয় তলা ভবন নির্মাণের কথা সিদ্ধান্তের পর্যায়ে রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর