বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধানের দামে লাফ, আরও দামি ভাত

  •    
  • ৩০ মে, ২০২২ ১২:২৬

দিনাজপুরের বিভিন্ন হাটে এক সপ্তাহ আগে ৭৫ কেজির উনত্রিশ ধান বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ টাকায়। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। সেই সঙ্গে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

দেশের দ্বিতীয় ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলা। সারা দেশের মতো কয়েক দিন ধরে এই জেলায়ও চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল থেকে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দরে।

চাল না পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মিলমালিকরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে ধানের দাম বেড়েছে লাফিয়ে। ধানের দাম বেশি হওয়ায় তা থেকে চাল তৈরি করতে খরচও বেড়েছে। ফলে আগের দামে বাজারে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না তারা।

দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারের এনএ মার্কেটের চাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে চালের দাম অনেকটা বেড়েছে। বাজারের দোকানগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত চাল। চাল না থাকায় দোকান বন্ধ রেখেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ৫০ কেজি বস্তার মিনিকেট চাল ৩ হাজার ৫০, আটাশ ২ হাজার ৭৫০, উনত্রিশ ২ হাজার ৫০০, পাইজাম ২ হাজার ৮০, গুটি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৮০, মোটা ১ হাজার ৭৫০, কাটারিভোগ ৫ হাজার ৫০০, শম্পা কাটারি ৩ হাজার ২০০, চিনিগুড়া ৫ হাজার ও আতপ কাটারি চাল ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

২৫ কেজির বস্তার বাসমতি চাল ১ হাজার ৮৫০, নাজিরশাইল ১ হাজার ৮০০, মিনিকেট ১ হাজার ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে বস্তাপ্রতি কম ছিল।

এ ছাড়া দিনাজপুরের বিভিন্ন হাটে এক সপ্তাহ আগে ৭৫ কেজির উনত্রিশ ধান বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ টাকায়। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। ৭৫ কেজির সম্পা ধান ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে, ৭৫ কেজি বস্তার আটাশ ধান ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে আয় হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এর মধ্যে রিকশামালিককে দিতে হয় ৪০০ টাকা। বাকি ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে আমার সংসার চালাতে হয়। সারা দিন আমাকে চা-নাশতাও খেতে হয়। চারজনের পরিবারে প্রতিদিন আমার ২ কেজি করে চাল প্রয়োজন। এখন ২ কেজি চাল কিনতে গেলে আমাকে প্রায় ১২০ টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে। দিন দিন হু হু করে চালের দাম বাড়ছে। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে।’

একই কথা বললেন দিনমজুর সাইফুল ইসলাম জামাল। তিনি বলেন, ‘দিন আনি, দিন খাই। যেভাবে চালের দাম বাড়ছে, তাতে তো কয়েক দিন পর না খেয়ে থাকতে হবে। সারা দিন খাটি, ২০০ টাকা পাই। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে চাল কিনব না অন্য কিছু কিনব।’

ধানের ভরা মৌসুম হলেও দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম অনেক বেড়েছে বলে জানালেন এনএ মার্কেটের খাদ্যভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আলালউদ্দীন বেপারী তিনি বলেন, ‘এই দুই সপ্তাহ ধরে আমি মিলে তিন গাড়ি চালের অর্ডার দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক বস্তাও চাল পাইনি। মিলে বারবার যোগাযোগ করা হলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় নিচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘মিলমালিকরা এক দিন পার করলেই প্রায় ২০ হাজার টাকা বেশি পাবে। আমি বহুদিন ধরে চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এ রকম অবস্থায় আমাকে আগে কখনও পড়তে হয়নি।’

মিলাররা চাল ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ একই মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আজগার আলীরও। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মিলাররা ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা মিল থেকে চাল ছাড়ছেন না। কেননা চাল যত দিন আটকে রাখা যাবে, তত দিন চালের দাম বাড়তে থাকবে।’

এ ব্যাপারে প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিল সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও পাটোয়ারী বিজনেস হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ‘ইরি-বোরো এই মৌসুমে আমরা মিলমালিকরা অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। গত বছর আমরা যে ধান কিনেছি, তা এ বছর বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। বাজার থেকে ধান কিনে চাল বানাতে গিয়ে আমাদের খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই আগের দামে চাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর বাজারে বর্তমানে চালের চাহিদা বেশি। তাই মিল থেকে চাল দিতে মিলমালিকরা হিমশিম খাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেননি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি। পরিচয় জানিয়ে তাকে এসএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিভাগের আরো খবর