বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করা হলো না পলাশের

  •    
  • ৩০ মে, ২০২২ ১২:২২

পলাশের ফুপা মো. জিলানি জানান, পলাশের পরিবার একেবারে হতদরিদ্র। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকে। নিজেদের কৃষি জমিও নেই। তার বাবা কখনও অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, কখনও বেকার বসে থাকেন। পলাশ পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকায় কোনোমতে সংসার চলত।

চার ভাইয়ের মধ্যে বড় পলাশ আহমেদকে নিয়ে বাবা-মার ছিল অনেক স্বপ্ন। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবে। অভাবের পরিবারে সচ্ছলতা আনবে।

লাভলু মিয়া-আন্না বেগম দম্পতির সেই স্বপ্ন আর কোনো দিন পূরণ হবে না। হলের পুকুরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে তাদের ছেলে পলাশ আহমেদ।

পলাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। থাকতেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। এই হলেরই পুকুরে ডুবে রোববার দুপুর ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

রাত ১টার দিকে তার মরদেহ আনা হয় জামালপুরের মাদারগঞ্জের শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ি এলাকায় নিজেদের বাড়িতে।

লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আন্না।

আহাজারি করে বলেন, ‘আমার বাবা নড়ে না কে? বাবায় কইছিল বিসিএস ক্যাডার হবো। আমারে আর কষ্ট করবের দিবে না। বাবায় এহন মরার গাড়িত শুয়ে আছে। আমার বাবা কীবেই মরল? আল্লাহ তুমি আমারে মারলা না কেন?’

পলাশের ফুপা মো. জিলানি জানান, পলাশের পরিবার একেবারে হতদরিদ্র। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকে। নিজেদের কৃষি জমিও নেই। তার বাবা কখনও অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, কখনও বেকার বসে থাকেন।

পলাশ পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকায় কোনোমতে সংসার চলত।

খালাতো ভাই মো. সাইদ বলেন, ‘পলাশ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। ক্লাস ফাইভে ও এইটে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তার বাকি তিন ভাইও তার মতো মেধাবী।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি স্বজনদের আহ্বান, তারা যেন পলাশের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হাউস টিউটর জামিল শরিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরই আমরা পলাশের মরদেহ নিয়ে চলে এসেছি। এই মুহূর্তে ওর পরিবারকে সহায়তা করার জন্য তেমন কিছু করতে পারিনি। ঢাকায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পলাশের পরিবারকে সহায়তা করার ব্যবস্থা করা হবে।’

পলাশের খালাতো ভাই সুমন শিকদারের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হলের পুকুরে নেমে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু হচ্ছে।

সুমন বলেন, ‘যে পুকুরে গোসল করা নিষেধ সেখানে প্রায় প্রতি বছর গোসলে নেমে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু হয়। কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য এমন ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। পুকুরটিতে ছাত্রদের গোসল একবারে বন্ধ করা দরকার।’

এ বিষয়ে হাউস টিউটর জামিল বলেন, ‘আসলে এখন একটু গরম বেশি। তাই ছাত্ররা সুযোগ পেলেই পুকুরে নেমে পড়ে। তাদের আটকানো যায় না। তবুও আমরা বিষয়টি দেখব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পলাশকে দাফন করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর