বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভুল পাতায় চড়া মাশুল চা চাষির

  •    
  • ৩০ মে, ২০২২ ০৮:৩৫

চা পাতা উৎপাদনে নতুন পঞ্চগড়ের চাষিরা। তাই পাতা সংগ্রহের ক্ষেত্রে শুরু থেকে তাদের অনেকেই কতগুলো ভুল করে আসছেন। এই ভুলের জন্য এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন পঞ্চগড়সহ উত্তরের সমতল অঞ্চলের চা চাষিরা।

চা পাতা সংগ্রহের হিসাবটি হলো- আড়াই থেকে তিন পাতা। অর্থাৎ পাতা যতো কচি হবে চায়ের মানও তত ভালো হবে। কিন্তু হিসেবে গরমিল করে বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড়সহ উত্তরের সমতল অঞ্চলের চা চাষিরা। শুরু থেকে তারা চা গাছের প্রতি ডগায় ৬ থেকে ৭ পাতা করে কারখানাগুলোকে সরবরাহ করে আসছেন। এতে তাদের চা পাতার গুণগত মান কমে গেছে।

চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নিম্নমানের এই চা পাতা অকশন মার্কেটে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে না। ফলে চাষিরাও চা পাতার দাম পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় চাষিদেরকে চা গাছের আড়াই থেকে তিন পাতা সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছে চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি।

নির্দেশনা মেনে কিছু চাষি তিন পাতা করে সরবরাহ শুরু করলেও অনেকেই হিসেব মেলাতে পারছেন না।

চা বোর্ড এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সচেতনতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চা চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় চাষিরা কাঁচি কিংবা দা দিয়ে কেটে চা গাছের পাতা সরবরাহ করেন। অথচ চায়ের গুণগত মান এবং রাসায়নিক উপাদানগুলো ঠিক রাখতে হাত অথবা মেশিন দিয়ে চা পাতা প্লাকিং করা প্রয়োজন। আর দেশের অন্যান্য জেলায় ৩/৪ পাতা প্লাকিং করা হলেও পঞ্চগড়ে ৬/১০ পাতা প্লাকিং করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এতে তাদের চা পাতার দাম কমে গেছে।

পঞ্চগড়ের বিসমিল্লাহ টি ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিঞা বলেন, ‘চাষিরা গাছের ডালসহ ৭/৮ পাতার চা পাতা নিয়ে আসে। এতে কারখানা জ্যাম হয়ে যায়। চা পাতার মান নষ্ট হয়। অকশন মার্কেটে সিলেটের চা বিক্রি হয় দুই থেকে তিন শ টাকা কেজি। মান খারাপ হওয়ার কারণে পঞ্চগড়ের চা বিক্রি হয় ১২০ থেকে বড়জোর ১৪০ টাকা কেজি।’

জাহাঙ্গীর আলম জানান, নির্দেশনা মেনে বর্তমানে যেসব চাষি ৩ থেকে ৪ পাতা করে দিচ্ছেন তাদেরকে নির্ধারিত মূল্য প্রদান করা হচ্ছে।

তেঁতুলিয়ার সফল চা চাষি কাজী আনিস বলেন, ‘প্রথম থেকেই চাষিদের বড় পাতা সরবরাহের অভ্যাস হয়ে গেছে। আর বড় পাতা কাচি দিয়ে কাটলে চা গাছের ক্ষতি হয়, আবার অকশন মার্কেটে ওই চা পাতার দামও কমে যায়। চাষিদের তাই সমন্বিত পদ্ধতিতে চা পাতা সরবরাহ করা প্রয়োজন।’

চা বিশেষজ্ঞ মাসুদুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ের চাষিরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে চা পাতা উৎপাদনের জন্য এখনও প্রশিক্ষিত হয়ে ওঠেনি। ৭০ শতাংশ ভালো পাতা হলেও চায়ের মান ঠিক থাকে। ভালো মানের চা তৈরির জন্য চাষিরা যদি একটি পাতা একটি কুড়ি ৫ শতাংশ, দুটি পাতা একটি কুড়ি ৫৫ শতাংশ, তিনটি পাতা একটি কুড়ি ১৫ শতাংশ, নরম ভাঞ্জি ১৫ শতাংশ, শক্ত ভাঞ্জি ৫ শতাংশ, শক্ত পাতা ১০ শতাংশ সরবারহ করেন তাহলে চায়ের মান ঠিক থাকবে।

জানা গেছে, বড় পাতা সরবরাহ করায় পঞ্চগড়ের চাষিদের কাছ থেকে চা উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার দাম দেয় মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা। আর বড় চা পাতার অজুহাতে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ চা পাতার দামও দেয়া হয় না।

চাষিদের অভিযোগ, এই দামে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। পরে এ নিয়ে আন্দোলনের মুখে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৮ টাকা নির্ধারণ করে চা পাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটি। সেই সঙ্গে চাষিদেরকে ৩ থেকে ৪ পাতা করে সরবরাহ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ৬/৭ পাতার চা পাতা ফিরিয়ে দিচ্ছে কারখানাগুলো।

এদিকে কারখানাগুলো ৩ থেকে ৪ পাতা করে সংগ্রহ করা চা পাতা নির্ধারিত ১৮ টাকা করে কিনে নিলেও ঠকে যাওয়ার অভিযোগ চাষিদের। তাদের দাবি, ৩ থেকে ৪ পাতা করে সরবরাহ করা চা পাতার আরও বেশি মূল্য দিতে হবে কারখানাগুলোকে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল-মামুন বলেন, ‘গুণগত মান ঠিক রেখে চা পাতা কাটার জন্য খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে আমরা চা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা সব চাষিকে আড়াই থেকে ৩ পাতা করে সরবরাহ করতে বলি। কিন্তু অনেক চাষি তা মানেন না। ৬ থেকে ৭ পাতায় ভালো মানের চা পাতা তৈরি সম্ভব নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষেরও এসব চা কেনা ঠিক নয়।’

চায়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা ভালো মানের পাতা দিচ্ছেন তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। আমরা বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেছি। আশা করি, নির্ধারিত মূল্যের কম দামে পাতা কেনার অভিযোগ আর থাকবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর