সদ্য জেলে যাওয়া ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের সংসদ সদস্য পদ নিয়ে এখনই কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হলেও এই ব্যাখ্যার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘আমার জানামতে তিনি (হাজি সেলিম) এই মামলায় দণ্ডের বিষয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আপিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদ 'এফেক্টেড' (ক্ষতিগ্রস্ত) হয় না, এটাই কিন্তু রায়ে আছে।’
এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের গোটা তিনেক রায় আছে বলে জানান মন্ত্রী।
রোববার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে এক কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় আইনমন্ত্রী ডাটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিষয়েও বক্তব্য দেন।
হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল দুটি ধারার একটিতে ১০ বছর এবং একটিতে তিন বছর করে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। এরপর ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করে।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করে হাজি সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় হাইকোর্ট।
গত ২২ মে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৭। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন হাজির সেলিম, সঙ্গে জামিনও চেয়েছেন, যা আপিল বিভাগের শুনানির অপেক্ষায় আছে।
হাজী সেলিমের ক্ষেত্রে আপিলের রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতের রায় ঘোষণার ২৫দিনের মধ্যেই লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্য পদ বাতিল করা হয়।
কুয়েতের আদালত যেদিন তার শাস্তির রায় ঘোষণা করা হয় সেদিন থেকেই ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে তার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।
আইনমন্ত্রী কথা বলেন ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়েও। তিনি বলেন, স্টেক হোল্ডারদের যৌক্তিক পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। তবে কোনো অযৌক্তিক পরামর্শ গ্রহণ করা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘ডাটা সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের আগে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি, ব্যবসায়িক প্রতিনিধিসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনা করা হবে।‘
এর আগে তিনি জুন মাসের এক তারিখে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে ডাটা সুরক্ষার ব্যাপারে কী কী আইন আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যে উদ্দেশ্যে এই প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেই উদ্দেশ্য যাতে সাধিত হয়, সেই আইন করা হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বন্ধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি। ডিজিটাল মাধ্যমে যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেগুলো দমন করার জন্য এই আইন করা হয়েছে।
মামলাজট প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ জট কমানোর ব্যাপারে বিচারকদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।
‘মামলাজট কমানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৯ সালের পূর্বে বিচারক ছিল মাত্র সাত থেকে আটশ। এখন এ সংখ্যা উনিশ শতের উপরে। অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বিচারকদের যানবাহন সমস্যা সমাধানের পথে। অতি শিগগির তাদের জন্য জেলা পর্যায়ে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আইন সচিব গোলাম সারওয়ার।