পুলিশি হয়রানি আর গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ঘরে ঘরে। নারী ও শিশু ছাড়া পরিবারের অন্যরা তাই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। পাবনা ঈশ্বরদীর ৮টি গ্রামের এ চিত্র। পিটিয়ে যুবক হত্যার এক মামলায় থমথমে পরিবেশ গ্রামগুলোতে। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দোকান-বাজার।
সরেজমিনে রোববার দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ মাঝদিয়া মুন্সিপাড়া, বিল বামনি, ঘোষপাড়া, আড়ামবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া, বিলবামনী, আসনা, মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন, ইলশামারি গ্রামসহ আশপাশের এলাকায়। সেখানে বাজারে নেই ব্যস্ততা, অনেক দোকানপাট বন্ধ। সংসারের প্রয়োজন মেটাতে নারীদের উপস্থিতি কিছু দোকানে। কৃষিকাজেও দেখা নেই গ্রামের পুরুষদের।
বাড়িতে পুরুষ সদস্য না থাকায় গৃহস্থালির প্রায় সব কাজ করছেন নারীরা। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাঁড়া ইউনিয়নের ইলশামারি গ্রামে গত ২২ মে ভোরে চোর সন্দেহে রাব্বি হোসেন চঞ্চল নামে এক তরুণকে এলাকার লোকজন হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
রাব্বি হোসেন চঞ্চলের বিরুদ্ধে চুরি ও মাদকের চারটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তাকে পিটুনির আগে জনতা গভীর রাতে একটি দোকানের পাশ থেকে তাকে আটক করে। চুরির অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে জখমের পর পাঠানো হয় হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার আগেই মৃত্যু হয় চঞ্চলের।
নিহত রাব্বি হোসেন চঞ্চলের বাড়ি মাঝদিয়া গ্রামেই। তার পিতা জাহিদুল ইসলাম এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয় সাতজনের নাম। এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে। এ মামলার খবর এলাকায় পৌঁছার পরই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সাঁড়া ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম। এ অবস্থায় স্থানীয় বাজারঘাট অনেকটাই জনশূন্য।
গ্রামের লোকজন বলেন, মূলত পুলিশের ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকছেন না স্থানীয়রা। আসামি হিসেবে আটকের পাশাপাশি সাক্ষী হিসেবেও অনেককে ফাঁসিয়ে দেয়া হবে বলে সন্দেহ গ্রামবাসীর। তাই নিরীহ লোকজন মামলার খবর পেয়েই গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। অন্য এলাকায় পালিয়ে গেছেন তারা গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক রানা কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কথা বলেছেন স্থানীয়দের সঙ্গে। মামলা হলেও খেটে খাওয়া মানুষের ভয় নেই বলে তিনি আশ্বস্ত করেন সকলকে। দোকান খুলে ব্যবসা ও চাষাবাদ শুরু করতে বলেন তিনি। তবে চেয়ারম্যানের আশ্বাস পেয়েও এলাকায় ফেরেননি অনেকে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানের বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’