আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা সফররত ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অফ পিস অপারেশন-এর সামরিক উপদেষ্টা ও সহকারী মহাসচিব জেনারেল বিরামে ডিওপ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জিওসি-ইন-সি ইস্টার্ন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা।
বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎটি অনুষ্ঠিত হয় হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এতে বলা হয়, বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস পালনে বৃহস্পতিবার সকালে তেঁজগাও পুরাতন বিমানবন্দরে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ অন্য সব সেনানিবাসে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সিলেট ও রংপুর সেনানিবাসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসে সিলেট সেনানিবাসে শোভাযাত্রা। ছবি: আইএসপিআর
বিকেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘শান্তিরক্ষা অপারেশনের বিবর্তনের মডেল: সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় রূপান্তরের রূপরেখা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
এ ছাড়া সেমিনারে তিন বাহিনী প্রধান, সাবেক সেনাপ্রধানরা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, সশস্ত্র বাহিনী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরাপত্তা বিশ্লেষক, শিক্ষাবিদ, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সামরিক উপদেষ্টা, বুদ্ধিজীবী এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাসদর দপ্তরে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জিওসি-ইন-সি ইস্টার্ন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা। ছবি: আইএসপিআর
সেমিনারে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। অপ্রতিসম হুমকির উত্থান, রাষ্ট্রবিরোধী সদস্য ও সংগঠনের উপস্থিতি, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিঘ্নিত পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পরিস্থিতিকে বহুগুণে জটিল করে তুলেছে।
ফলে শান্তিরক্ষীরাও নানা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলেও মনে করেন বক্তারা। তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে নারী ও শিশুরা ক্রমাগত বহুমুখী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই এ জাতীয় সংঘাত প্রতিরোধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীদের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষা কন্টিনজেন্টগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যপদ্ধতির পরিবর্তন জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
এর আগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত জেসিও এবং ওআরদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের মোস্তফা কামাল লাইন এলাকায় বহুতল ভবন ‘শান্তিরক্ষী নিবাস’ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
ভবনটি নির্মিত হলে জাতিসংঘে মোতায়েন শান্তিরক্ষীদের পরিবারের আবাসন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতে ঢাকা সফররত ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অফ পিস অপারেশন-এর সামরিক উপদেষ্টা ও সহকারী মহাসচিব জেনারেল বিরামে ডিওপ। ছবি: আইএসপিআর
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সফলতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের গর্বিত শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৫টি মিশন সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৯টি দেশে মোট ১০টি মিশনে ৫ হাজার ৪৪৩ জন সেনাসদস্য নিয়োজিত আছেন। অন্যান্য বাহিনীয় মিলিয়ে এ সংখ্যাটি ৬ হাজার ৮২৫ জন।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৬ জন নিহত এবং ২২৮ জন সদস্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।