বরিশাল নগরীতে সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবেক ছাত্রদল নেতা জেহাদুল ইসলাম জেহাদের বিরুদ্ধে।
রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর শীতলা খোলা এলাকার মুমীতু কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
অপূর্ব অপু সময় টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান।
অভিযোগে বলা হয়, বরিশাল নগরীর একসময়ের ত্রাস জেহাদের নেতৃত্বে চারজন সাংবাদিক অপুকে প্রাইভেট কারে তুলে অপহরণের চেষ্টা চালান।
জেহাদ বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ২০০২ সালের কমিটির ছাত্রবিষয়ক সস্পাদক ছিলেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে সম্প্রতি প্রকাশ্যে বেরিয়েই সন্ত্রাসে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অপূর্বর অভিযোগ, ‘নগরীর কালীবাড়ি রোডে সময় টিভি অফিসে যাওয়ার সময় মুমীতু কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হয়ে এক ব্যক্তি আমাকে গালাগালের একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তিনি ইট ও কাদা ছুড়ে মারেন।
‘মুমীতু কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এলে আরেকজন আমাকে জবরদস্তি সাদা একটি প্রাইভেট কারে (বরিশাল মেট্রো গ ১১২১৫৫) তোলার চেষ্টা করেন। তখন দৌড় দিয়ে রক্ষা পাই।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপদ স্থানে গিয়ে সহকর্মী ও পুলিশকে ফোন দিই। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। তারা কেন হামলা করেছে বলতে পারছি না।’
বরিশাল নগরীতে রোববার বিকেলে সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে সাদা প্রাইভেট কারে তুলে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ছবি: সিসি টিভি ফুটেজপ্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাংবাদিক অপুকে প্রাইভেট কারে তুলে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পান। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন সাবেক ছাত্রদল নেতা জেহাদ। এ ছাড়া মামুন, আলম ও আরেকজন ছিলেন।
ঘটনাস্থলসংলগ্ন কনফেকশনারি দোকানি বেলায়েত মুহুরি বলেন, ‘জেহাদের নেতৃত্বে সাংবাদিক অপুকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি দেখেছি- জেহাদের সাথে আরও কয়েকজন ছিল। ওই সময় অপুকে টেনে গাড়িতে উঠাতে চেয়েছিল জেহাদ। একপর্যায়ে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিয়ে বেঁচে যান অপু।’
বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ‘প্রকাশ্যে একজন সাংবাদিককে অপহরণের চেষ্টার ঘটনা উদ্বেগজনক। আমরা এর বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হরিদাস নাগ বলেন, ‘আমরা সিসি টিভি ফুটেজ দেখেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুমীতু কমিউনিটি সেন্টারের মালিক শাহিন হোসেনকে আটক করা হয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক নাসিমুল হক বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ছাত্রদলের জেহাদ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আমরা তখন দেখেছি, এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভয়ে তটস্থ ছিল বরিশাল নগরবাসী। তার বিরুদ্ধে বরিশালের বিভিন্ন থানায় বেশকিছু মামলা রয়েছে। সেই সময়টায় জেহাদ বিএম কলেজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।
সাংবাদিক নাসিমুল বলেন, বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর আত্মগোপনে ছিলেন জেহাদ। পরে আওয়ামী লীগের কোনো এক নেতার হাত ধরে আবার প্রকাশ্যে আসেন। কিছুদিন আগে নগরীর হাজেরা খাতুন স্কুলের পাশে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জমি দখল করতে গিয়েছিলেন জেহাদ। সেখানে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ ৫ জনকে আহত করা হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম জানান, সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে অপহরণ চেষ্টার ঘটনায় রাত পৌনে ১০টার দিকে মামলা হয়েছে। অপু নিজে মামলার বাদী। এতে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-সাত জনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি বলেন, ‘তদন্ত করে দোষীদের শিগগরিই গ্রেপ্তার করা হবে।’