বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমগাছ দেখতে তিন বছরের শিশুরও টিকিট

  •    
  • ২৯ মে, ২০২২ ১৯:২৮

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বিশাল আকৃতির আম গাছ দেখতে ভিড় করছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। সুযোগ বুঝে দর্শনার্থীর বিনিময়ে গাছ দেখার ব্যবস্থা করেছেন এটির মালিক। তবে সেখানে শিশুদেরও টিকিট কাটতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বহু বছর পুরনো সূর্যপুরী আমগাছের কথা প্রচার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন গাছটি দেখতে আসছে। সুযোগ বুঝে আম গাছ দেখার জন্য ২০ টাকা টিকিট চালু করেছেন গাছের মালিক।

টিকিট কাউন্টারে এমনকি তিন বছর বয়সী শিশুর টিকিট কিনতেও বাধ্য করা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রংপুর থেকে আসা দর্শনার্থী প্রিয়াংকা সেন।

প্রিয়াংকা সেন বলেন, ‘‘‘দুই বিঘা জমির উপর আমগাছ” ফেসবুকে এমন সংবাদ দেখে রংপুর থেকে পরিবার ও আত্মীয়সহ মোট ৯ জন আমগাছটি দেখতে এসেছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমাদের সঙ্গে থাকা তিন বছরের শিশুরও টিকিট কিনতে বাধ্য করা অমানবিক ও জুলুম। আমাদের সঙ্গে তিনটা শিশু আছে। তাদের প্রত্যেকের টিকিট করতে বাধ্য করা হয়েছে কাউন্টারে।’

চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা দর্শনার্থী রেহেনা জান্নাত রানীও পরিবার নিয়ে এসেছেন আমগাছ দেখতে। তারও একই অভিযোগ। বলেন, দুই বিঘা জমির উপর না হলেও আমগাছটি বেশ বড় আর অন্যরকম। গাছটি ছাড়া এখানে আর কিছুই নেই। মহিলাদের জন্য উন্নত মানোর কোনো রেস্ট হাউজ নেই। শিশুদের জন্য টিকিট নিতে বাধ্য করেছে, অথচ তাদের খেলার তেমন কোনো রাইডস নেই। একটি নাগরদোলা রাখা হয়েছে। তবে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। আমার তিন বছরের শিশুকে আমগাছটি দেখার আগে টাকা দিতে হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগছে। মনে হয়েছে ব্যবসা খুলে বসেছে মালিকপক্ষ।’

দর্শনার্থী রব্বানী বলেন, ‘আমগাছটি বাণিজ্যিকভাবে দেখতে হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে একবার এসেছিলাম, তখন টিকিট লাগেনি৷ এখন টিকিট কাটতে হচ্ছে। সেটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমার প্রশ্ন হলো: এত বছরেও এখানে একটুও উন্নতি দেখলাম না জায়গাটার। মালিক পক্ষ চাইলে ৫০ টাকা করুক টিকিটের মূল্য, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু দর্শনার্থীদেরও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিৎ করার আহ্বান থাকবে সংশ্লিষ্টদের প্রতি।’

সানজিদা আকতার বলেন, ‘শহর থেকে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে বেড়াতে এসেছি৷ ভালো লাগলো গাছটা। একটি গাছ দেখতে আর কতক্ষণ লাগে। ভালো রেস্টুরেন্ট, আর অন্যান্য ব্যবস্থা থাকলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে। আমগাছটা হতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এটিকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে তেমন কোনো উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’

আমগাছটি দেখে সবার মতো নিজের ভালোলাগা প্রকাশ করেছেন গাজীপুর থেকে আসা দর্শনার্থী হিরন চন্দ্র। বলেন, ‘দুই বিঘা নয়। গাছটি ২০-২৫ শতক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এমন গাছ আগে কখনো দেখিনি। এখানে অনেক টাকা আয় করেন মালিক পক্ষ। কিন্তু দর্শনার্থীদের জন্য তেমন সুবিধা নেই। থাকা খাওয়ার কোনো পরিস্কার জায়গা নেই। মালিক পক্ষ চাইলেই এখানে ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।’

উপজেলার হরিণমারী গ্রামে প্রকৃতির খেয়ালে বেড়ে ওঠা বিশাল আম গাছটির সঠিক বয়স সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই স্থানীয়দের। গাছ মালিকদের দাবি ২০২ বছর বয়স গাছটির।

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুধু প্রবেশপথে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং তিন দিকে বাঁশ তারের বেড়া। ভেতরে আড়াই একর জমি। প্রাচীরের ভেতর কয়েকটি আম গাছ। তার মধ্যে একটি আমগাছ সবচেয়ে বড়। এত বড় যে, অনেকের ভাষ্যমতে এশিয়ার সর্ববৃহৎ আমগাছ এটি। এই গাছ থেকে কলম পদ্ধতিতে ২০ বছর আগে আরেকটি গাছ একইভাবে বড় হতে শুরু করেছে।

মাটি থেকে কয়েক ফুট পরেই গাছটির তিন দিকে ১৯টি ডাল পালা ছড়িয়েছে। মাটির সাথে নুয়ে গিয়ে একেকটি ডাল হয়েছে একেকটি গাছের মতো দেখতে। উপরেও রয়েছে ডালপালা। ডালে ডালে থোকায় থোকায় আম ঝুলে আছে। এক গাছের আম দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে এ বছর।

গাছের ফল ক্রেতা বলেন, তিন বছরের জন্য গাছটির ফল কিনেছেন তিনি। গত বছর ফলন আসেনি। মাত্র ৩০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছিলেন। এবার ভালো ফলন এসেছে। শিলাবৃষ্টিতে ফল ঝরে গেলেও এবার লাভের আশা করছেন৷ দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।

গাছের মালিক নুর ইসলাম বলেন, ‘গাছটির বয়স ২০২ বছর। দুই বিঘা নয়, ৫০ শতক জায়গা জুড়ে এটি বিস্তৃত। গ্রামের ঐতিহ্য বহন করছে গাছটি। গাছটির যত্ন নিতে টিকিটের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া আমরা দর্শনার্থীদের জন্য কিছু বসার ব্যবস্থা করেছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দর্শনার্থীদের জন্য আরও সুযোগ-সু্বিধা বাড়ানোর ইচ্ছা আমাদের আছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোনো আলাপ বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমগাছটি পরিচর্যার জন্য খরচ রয়েছে। যেহেতু এটা ব্যক্তি মালিকানাদীণ, সেখানে আমরা ওভাবে কিছু বলতে পারি না। তবে তিন বছরের শিশুদের কাছে টিকিট বিক্রি বিষয়টা জানা ছিল না। নিশ্চয়

এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বলব। আমরা দর্শনার্থীদের সুবিধা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি।’

এ বিভাগের আরো খবর