পোশাক কারখানায় চাকরি খুঁজতে ঢাকায় গিয়েছিলেন ঝালকাঠির আঁখি বেগম। সঙ্গে নিয়ে যান ৯ বছরের ছেলে আরাফাত ও ৪ বছরের মেয়ে মরিয়মকে।
কিন্তু চাকরি না হওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা-ভান্ডারীয়া রুটের যমুনা লাইন পরিবহনে করে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। কিন্তু রোববার ভোর ৫টায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বামরাইলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে নিমিষেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় আঁখির স্বপ্ন।
আঁখি ও তার মেয়ে প্রাণে বাঁচলেও ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ছেলে আরাফাত ইসলাম।
গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আঁখি বেগম ও শিশু মরিয়ম।
আরাফাতের নানা আলী আকবর জানান, আরাফাত ঝালকাঠি সদরের নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের নৈয়ারী গ্রামের মনির হাওলাদারের ছেলে। তিন বছর আগে ওমান প্রবাসী মনিরের সঙ্গে আঁখির বিয়েবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে আরাফাত ও মরিয়ম মায়ের সঙ্গেই থাকত তাদের বাড়িতে।
সন্তানদের ভরণপোষণ মেটাতে আঁখি চাকরির চেষ্টা করছিলেন। পোশাক কারখানায় চাকরি খুঁজতে গত সপ্তাহে দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় যান আঁখি। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
আঁখি বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘বাসটি উজিপুরে আসার পর বিকট শব্দে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। পরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে জানতে পাই আমার ছেলে বেঁচে নেই।’
ময়নাতদন্ত ও সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরাফাতের মরদেহ গ্রহণ করেছে তার ফুপু মুক্তা বেগম।
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় নৈয়ারী গ্রামে আরাফাতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
এর আগে রোববার ভোরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে উজিরপুর উপজেলার বামরাইলে বাস দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হন।
উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ জানান, যমুনা পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার দিকে যাচ্ছিল। বরিশালের বামরাইলে এটি নিয়ন্ত্রণ হারালে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
এতে ঘটনাস্থলেই শিশুসহ ৯জন মারা যান। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুর রহমান খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, চালক ঘুমিয়ে পড়ায় বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে বাসটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায়।