বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উদ্যোক্তা তৈরির দায়সারা প্রশিক্ষণ

  •    
  • ২৯ মে, ২০২২ ১৮:৫৮

কুড়িগ্রামে নারী উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ কোনো কাজে লাগছে না। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষাণার্থীদের প্রাপ্য অর্থ থেকে কেটে রাখা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ উপকরণের জন্য প্রতি ব্যাচে ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে উপকরণ কেনা হয়।

কুড়িগ্রামে রাজারহাটে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ চলছে দায়সারাভাবে। বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ হলেও প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, তা তাদের কাজে লাগছে না।

উপজেলায় শত-শত নারী প্রশিক্ষণ নিলেও তা শুধু কাগজে-কলমে। লোক দেখানো প্রশিক্ষণের নামে নানা কৌশলে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

রাজারহাট উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয় সাইনবোর্ডহীন তিন তলা ভবনে এই সরকারি অফিস। ভেতরে প্রবেশ করে চিত্র দেখে কারোই মনে হবে না এখানে নারী উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যে যার মতো গল্প গুজবে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীরা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের বিউটিফিকেশন এবং ফ্যাশন ডিজাইন কোর্সের ১৪ ও ১৫তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলছে। লক্ষ্য, বিউটি পার্লার থেকে বুটিক শপ পর্যন্ত নানারকম উদ্যোগ নেবেন প্রশিক্ষণার্থীরা।

বছরে তিন মাস মেয়াদি চারটি কোর্স হয়। প্রতি কোর্সে দুটি ব্যাচে ১০০ জন নারী উদ্যোক্তা অংশ নেন।

তিন মাসের কোর্সে সরকারি ছুটিসহ অন্যান্য বন্ধের কারণে প্রশিক্ষণ হয় ৬০ দিন। প্রতিদিনের ভাতা হিসেবে ২০০ টাকা হারে প্র্রশিক্ষণার্থীদের ১২ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রশিক্ষণ শেষে সেই অর্থ থেকে ১ থেকে ২ হাজার টাকা কেটে নিয়ে বাকি তা প্রশিক্ষণার্থীদের দেয়া হয়।

এ ছাড়া প্রশিক্ষণ উপকরণের জন্য প্রতি ব্যাচে ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও শ্রেণিকক্ষে কোনো প্রশিক্ষণ উপকরণ পাওয়া যায়নি। প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে উপকরণ কেনা হয়।

বিধি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পাস ১৬ থেকে ৪২ বছরের অবহেলিত-বঞ্চিত নারীরা প্রশিক্ষণ নেবেন। কিন্তু বিধির তোয়াক্কা না করে অফিস সহকারী রেয়াচত আলী তার নিজের তিন মেয়ে এবং অফিসের অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মী ফাতেমা বেগমসহ পছন্দের নারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থেকেও প্রশিক্ষণের ভাতা নিচ্ছেন তারা।

দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে প্রতি ব্যাচে সরকারের বরাদ্দ টাকা থেকে ২-৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে অফিসের সিন্ডিকেট চক্রটি।

প্রশিক্ষণার্থী মিনারা বেগম বলেন, ‘এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসছি। নিজে কিছু করার জন্য। কিন্তু প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানে কোনো প্রডাক্ট (সরঞ্জাম) নেই। এসে গল্পগুজব করে সময় পার হয়। ১০০ টাকা করে নিয়েছে প্রডাক্ট (সরঞ্জাম) আনবে বলে। আজও সেই প্রডাক্ট নেই।’

প্রশিক্ষণার্থী আরিফা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কোনো কিছু শেখানো হচ্ছে না। বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষণ নিলেও এখানে কোনো প্রডাক্ট নেই। আমাদের নিজেদের প্রডাক্ট নিয়ে এসে একটু একটু শিখছি। প্রায় দুই মাস হলো প্রশিক্ষণের, আমাদের ভ্রু, চুল আর ফেসিয়াল শিখাইছে। কিন্তু পার্লারের বউ সাজ আমরা শিখতে পারি নাই। ফেসিয়ালের যেটা আসল, সেটাই আমরা শিখতে পারি নাই।’

আরেক প্রশিক্ষণার্থী লাবণী বলেন, ‘আমরা ব্যাচে ২৫ জন আছি। দুই মাস ধরে নিয়মিত উপস্থিত থেকে ক্লাস করছি ২১ জন। অথচ স্বাক্ষর হচ্ছে ২৫ জনের। কোথায় কীভাবে স্বাক্ষরগুলো হচ্ছে আমরা জানি না। প্রতিদিন ক্লাসে ২১ জনের স্বাক্ষর করি আমরা আর পরের দিন ক্লাসে এসে দেখি ২৫ জনের স্বাক্ষর।’

প্রশিক্ষক ফাহমিদা হক প্রশিক্ষণার্থীদের অনুপস্থিত থেকেও খাতায় উপস্থিতির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও তাদের কাছ থেকে জন প্রতি ১০০ টাকা নেবার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রডাক্ট কেনার জন্য টাকা তুলে জয়ন্তী রাণী ম্যাডামকে দেয়া হয়েছে। উনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন।’

অস্থায়ী পরিচ্ছন্নকর্মী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমাকে অফিস থেকে মাসে এক হাজার টাকা বেতন দেয়। আর আমার নাম প্রতিটি ব্যাচেই ঢুকায় করে দেয়। সেখান থেকে কিছু টাকা দেয়। এ ছাড়া আর কোনো টাকা পাই না।’

অফিস সহকারি রেয়াচত আলী প্রথমে নিজের মেয়েদের প্রশিক্ষণে রাখার কথা অস্বীকার করেন। পরে প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থীদের চাপে তার তিন মেয়েকে নিয়মিত প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা স্বীকার করেন তিনি। তাদের হয়ে নিজেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেবার কথাও তিনি স্বীকার করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রশিক্ষণার্থী ২০০ জন। তাদের প্রশিক্ষণ উপকরণ কেনার জন্য ৯০ হাজার টাকা এবং ভাতা হিসেবে ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।’

সিনিয়র প্রশিক্ষক রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার অফিসে কাজ করার কথা থাকলেও লোকবল কম থাকায় আমাকে ফিল্ডে কাজ করানো হয়। ভিজিডি, নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, মামলা-কোর্ট এগুলো আমাকে দেখতে হয়, যদিও আমার এগুলো কাজ নয়। কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমাকে ফিল্ডে যেতে হয়। এ জন্য আমার কোনো টিএডিএ দেয়া হয় না। বরাদ্দ আছে কিনা আমার জানা নেই।’

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জয়ন্তী রাণী মাসে দু-একবার এসে অফিস করেন। অফিস সহকারী রেয়াচত আলীর তত্ত্বাবধায়নে চলে অফিস। মন্তব্যের জন্যে জয়ন্তী রাণীকে অফিসে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম প্রশিক্ষণের এ দায়সারা অবস্থার কথা কিছু জানেন না বলে জানান। অনিয়মের তথ্য জানতে পারলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর