কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি পেশিশক্তি ব্যবহার করে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি চরম ভুল করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
কুমিল্লায় প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে নির্বাচন বন্ধ করে দেব। আমরা আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। আমরা যুদ্ধ চাই না। প্রতিযোগিতা চাই।
‘কেবল ভোটের দিন নয়, ভোট শেষেও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তদন্ত হবে। সে ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গত ফেব্রয়ারির শেষে দায়িত্ব নেয়া নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন। এই কমিশনের অধীনে বিএনপি ভোটে যাবে না জানালেও সেখানে দলটির সমর্থন ও প্রতীকে দুইবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া মনিরুল হক সাক্কু মেয়র পদে ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিচয়ে। দলটির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের আরেক নেতাও আছেন ভোটের লড়াইয়ে।
বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ না থাকলেও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হতে যাচ্ছে এটা স্পষ্ট।
আগামী ১৫ জুনের এই ভোট নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে নানা বিতর্কিত ভোটের কারণে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ অনেকটাই কম।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা ফেরানোর চ্যালেঞ্জের কথা বলছে নির্বাচন কমিশন।
রোববার বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ নির্বাচনে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিজয়ী হন এবং তা যদি নির্বাচনের পরে তদন্ত করে বের করা যায় সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ফৌজদারি আইনে মামলা করা হবে।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে নেয়া এই ভোটে বুথে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি যেন না থাকে, সেটিও নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোপন বুথ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রথমবারের মতো সিটিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
সিইসি বলেন, ‘কোনো কারণে যদি কোনো কেন্দ্রে ইভিএম নষ্ট হয়, কেউ নষ্ট করে ফেলে, সে ক্ষেত্রে কোনো ভোটার যদি বিকেল ৪টার আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হন তাদের জন্য রাত ১০টা হলেও ভোটগ্রহণ করা হবে। বয়স্ক কিংবা অসুস্থ ভোটারদের জন্য বাড়ি গিয়ে ভোট কাস্ট করার একটা পরিকল্পনা আছে নির্বাচন কমিশনের।
‘ভোট সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করার সব প্রস্তুতি আছে আমাদের, সে ক্ষেত্রে কেউ যদি সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করেন, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিরা নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন। তাই কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের অনুরোধ করব তারা যেন সৌহার্দ বজায় রেখে নির্বাচন শেষ করেন।’
এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দুলাল তালুকদার, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর হোসেন, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম কমিশনার ফারুক আহম্মদ খান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী, কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
এ সময় নৌকা প্রতীকের পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী গত দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম এবং হরিণ প্রতীকের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল।
এ ছাড়া বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য দেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া, আবুল হোসেন ছোটন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জমির উদ্দিন খান জম্পি, ২ নম্বর ওয়াডের মাসুদুর মাসুদ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার মাহমুদ জাবেদ, কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ মোমেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল জলিল, ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাহিদা আক্তার, ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী কাউছার বেগম সুমি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর
নেহার বেগমসহ আরও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয় নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৪৪টি কেন্দ্র হবে পুরুষদের, নারীদের জন্য ৪৭টি এবং নারী পুরুষ উভয় ভোট দেবেন এমন কেন্দ্র হবে ১৪টি। বুথ হবে ৬৪০টি।