গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পল্লী উন্নয়ন পদক দিয়েছে সেন্টার অন ইন্ট্রিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিরডাপ)।
গণভবনে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘আজিজুল হক পল্লী উন্নয়ন পদক ২০২১’ তুলে দেন সিরডাপের মহাপরিচালক ডা. চেরদসাক ভিরাপা।
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
পুরস্কারটি জনগণকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাকে সিরডাপ ‘আজিজুল হক পল্লী উন্নয়ন পদক ২০২১’ প্রদান করায় আমি মনে করি এটা আমার বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য। আমি তাদের জন্য এ পদক উৎসর্গ করছি। এ পদক প্রাপ্তির জন্য আমাকে মনোনয়ন করা মানে বাংলাদেশকে মনোনয়ন করা।”
সিরডাপ সবসময় তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পল্লী উন্নয়নের ওপর কাজ করে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখান থেকে একটা পুরস্কার পাওয়া, এটা শুধু আমার জন্য নয়, আমার দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক; বাংলাদেশকে সম্মান জানানো।’
গ্রাম উন্নত হলে, দেশ উন্নত হবে
তৃণমূল থেকেই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবসময় লক্ষ্য যে, এ দেশের উন্নয়নটা তৃণমূল থেকে হবে, গ্রাম থেকে হবে। ভিলেজ থেকে হবে। আর সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিয়েছি। যখনই সরকার গঠন করেছি, আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত হলে দেশেরও উন্নয়ন হয় বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। দেশের উন্নয়ন করতে হলে একেবারে তৃণমূলের মানুষকে বাদ দিয়ে কখনও উন্নয়ন হতে পারে না।’
গ্রামের মানুষকে স্ববলম্বী করতে নিজস্ব চিন্তা থেকে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামটি বদল করে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, যেখানে গ্রামের মানুষ হেঁটে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।’
প্রতি দুই কিলোমিটারে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে এখন প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার জন্য প্রতি দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় করা, যাতে করে ছেলেমেয়েরা হেঁটে স্কুলে যেতে পারে।
‘আমাদের প্রাইমারি শিক্ষা যেমন অবৈতনিক, পাশাপাশি আমাদের নারী শিক্ষাও অবৈতনিক। সেই সঙ্গে তৃণমূলের মায়েরা যখন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়, মায়েদের নামে আমরা বৃত্তি দিই।’
সরকার প্রায় শতভাগ মানুষকে সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা। আমাদের এখন যত মানুষ গৃহহীন আছে, অর্থাৎ ভূমিহীন-গৃহহীন তাদের আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি, যাতে একটা ঘর পেলে সেটাই মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সহায়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এগুলো আমরা দিচ্ছি। সেটাও মানুষের আর্থ-সামাজিক কাজে লাগে। এগুলো সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ফসল, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।’