প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারের নামে একের পর এক চুরির মামলা গ্রহণের অভিযোগ ওঠেছে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.জ.মো. মাসুদুজ্জামান মিলুর বিরুদ্ধে।
মাসোহারা না পেয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন ওসি, দাবি অভিযোগকারী ঠিকাদারের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।
বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শনিবার দুপুরে এই অভিযোগ করেন পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুরের মেসার্স সরদার ইলেক্ট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল।
ফেরদৌস ওয়াহিদ রাসেল লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার চাচা এনায়েত হোসেন সরদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। আমাকে ঘায়েল করতে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থানায় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করেন এনায়েত। ওসি সেই অভিযোগের কোনও ধরনের প্রাথমিক তদন্ত না করে সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন।
‘এছাড়া ১১ মে আমার নিজের জমিতে উত্তোলিত ঘর থেকে মিটার চুরির অভিযোগ দায়ের করেন চাচা এনায়েত। সেই অভিযোগও তদন্ত ছাড়া মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আমাকে গ্রেপ্তার করেন ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারের ছবি তুলে স্বপ্রনোদিত হয়ে ওসি বিভিন্নজনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করান।’
অভিযোগকারী আরও বলেন, ‘আমি পিরোজপুরের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। আমার মা, ভাই ও বোন ইউরোপে বসবাস করেন। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আমি সামান্য সাড়ে ১৮ হাজার টাকা চুরি করেছি। শুধু সেখানেই শেষ নয় আমার নিজের ঘরের মিটার চুরি আমি নিজে করেছি এমন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাভোগও করতে হয়েছে আমাকে।’
ওসি মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মাসোহারা দাবির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘ওসি মাসুদুজ্জামান পিরোজপুর সদর থানায় যোগ দেয়ার পরে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমাকে খবর পাঠাতেন এবং ডেকে মাসোহারা দাবি করতেন। আমি দিতে অস্বীকার করায় তিনি বলেছিলেন, আমাকে এমন ক্ষতি করবেন যেন কারো কাছে মুখ দেখাতে না পারি। আমি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও আমার বিরুদ্ধে একের পর এক চুরির মামলা তদন্ত ছাড়া গ্রহণ করে, তার মনে জমে থাকা ক্ষোভের প্রতিশোধ নিচ্ছেন।’
রাসেল আরও বলেন, ‘দাবি অনুযায়ী মাসোহারা না দেয়ায় ওসি আমার পারিবারিক বিরোধকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে আমাদের পরিবারকে উৎখাতের চক্রান্ত করছেন।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাসুদুজ্জামান মিলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জমি বিরোধের জের ধরে তার চাচার সঙ্গে বিরোধ আছে। চাচা মামলা করলে আমার কিছুই করার নেই।’
আর্থিক সুবিধা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘রাসেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় ৭ থেকে ৮টি মামলা রয়েছে। আমি থানায় যোগদানের পূর্বেই ওনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা ছিল। এখানে ঘুষ বা আর্থিক সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। নিজে বাঁচতে এমন অভিযোগ করছেন তিনি।’
‘২০১০ সালের একটি মামলা, ২০১২ সালের দুইটি ও ২০১৭ সালের একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি করা মামলাটির অভিযোগপত্র ২১ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করা হয়েছে,’ বলেন ওসি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযোগকারী রাসেলের চাচা এনায়েত হোসেনের মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়া হলে তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।