বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম

  •    
  • ২৮ মে, ২০২২ ১৪:৪২

দোকানি মো. স্বপন বলেন, ‘ভরা মৌসুমে যে চালের দাম বাড়ে, ১০ বছরের চাল ব্যবসার অভিজ্ঞতায় এমনটি আগে দেখিনি। তিন-চার দিন পরপরই চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন মিল মালিকরা। চালের দাম আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন মিলমালিকরা।’

বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। কুষ্টিয়ার বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল থেকে তাদের ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে ১ টাকা লাভ রেখে তারা ২ টাকা ব্যবধানে বিক্রি করছেন। আর মিল মালিকরা বলছেন, ভরা মৌসুমেও ধানের দাম বেশি। সে কারণে চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তবে ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। চালকল মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের নজরদারি শক্তিশালী করার দাবি তাদের।

শনিবার সকাল থেকে আরও ১ টাকা বাড়িয়ে কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে ভালো মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা দরে। কুষ্টিয়া পৌরবাজারের চালের দোকান মেসার্স মা ট্রেডার্সের মূল্যতালিকার বোর্ডে দেখা যায়, অটোমেটিক রাইস মিলের মিনিকেটের বিক্রয়মূল্য ৬৬ টাকা। আর সাধারণ মিনিকেট ৬৪ টাকা, কাজললতা চাল ৫৭ টাকা কেজি দরে রাখা হয়েছে।

এ দোকানের বিক্রেতা মো. রিপন বলেন, ‘মিলগেট থেকে প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ৫০ কেজির বস্তা মিলভেদে ৩ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা রাখছে। প্রায় ১ টাকা খরচ হয় মিল থেকে দোকানে তুলতে। তা ছাড়াও ২৫ কেজির বস্তার চালের দাম আরও ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি রাখেন মিল মালিকরা। আমরা সামান্য কেজিতে ১ টাকা লাভ করে বিক্রি করছি।’

এই বাজারের আরেক দোকান নিউ স্বপন স্টোর। এখানে দেখা গেল মিনিকেট সুপার ৬৪ টাকা কেনা, বিক্রি ৬৫। মিনিকেট নরমাল ৬২ টাকা কেনা, বিক্রি ৬৩ টাকা। আর কাজললতা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা। এই দোকানি মো. স্বপন বলেন, ‘ভরা মৌসুমে যে চালের দাম বাড়ে, ১০ বছরের চাল ব্যবসার অভিজ্ঞতায় এমনটি আগে দেখিনি। ৩-৪ দিন পরপরই চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন মিল মালিকরা। চালের দাম আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন মিল মালিকরা।’

কুষ্টিয়ার খাজানগর, দেশের সবচেয়ে বড় সরু ধান-চালের মোকাম। এখানে সাড়ে ৪০০ চালকল আছে। এর মধ্যে বড় অটোমেটিক রাইস মিল আছে ৫৫টি। এখান থেকে সারা দেশে সরু চাল সরবরাহ হয়। এই মিল মালিকরাই দেশের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রচার আছে।কথা হয় বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিনিকেট ধানের দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি মণ ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তবে, যশোরের ভৈরপায় আজকের বাজারের খবর শুনে মনে হচ্ছে ধানের দাম কিছুটা কমতে পারে। বাজারে ধানের আমদানি বেশি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন হলো ভরা মৌসুমেও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বোরো ধানের এই মৌসুমে যেখানে কম করে হলেও খাজানগর থেকে ২০০ ট্রাক ধান আসে সেখানে আসছে মাত্র ২০-৩০ ট্রাক। কৃষক বা ক্ষুদ্র মজুতদার যাদের কাছে ধান আছে তারা মনে করছে দাম আরও বাড়বে।

‘আর মিল মালিকরা মনে করছেন দাম পড়লে কিনব। এ কারণে ধানের বাজার একটু অস্থিতিশীল। তবে, শনিবার থেকে ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থাকলে এক সপ্তাহে দাম কমতে পারে। আর ধানের দাম কমলে চালের দামও কম রাখা যাবে।’

ধারাবাহিকভাবে চালের দাম বাড়ায় ভোক্তারা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। সেলিম নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘দিনে ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম হয়। চালের দাম এত বেশি, অন্য সবকিছুরই দাম বেশি। বাজার করে পোষাতে পারছি না।’

কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘মিল মালিকরা একেকটা অজুহাত সামনে এনে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। মনিটরিংয়ের দায়িত্ব যাদের তাদেরকে শক্ত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বোরো মৌসুমে সরু চালের এত দাম মেনে নেয়ার মতো নয়। মিলগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালালে দাম কমে যাবে।’

তবে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনই মিলগুলোতে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এতে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের ৫টি মনিটরিং টিম নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছে। অতিরিক্ত মুনাফা করা বা ধান-চাল মজুত করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। সময়মতো অভিযান চালানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর