একুশে গানের রচয়িতা, বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায় এই সাংবাদিকের কফিনবন্দি মরদেহ। এরপর তারই রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের সামরিক সচিব ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পর্যায়ক্রমে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, বিপ্লব বড়ুয়া শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনও। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সময় শহীদ মিনারে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি আসেনি, তারা কী ভুল করছে- এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই। গাফ্ফার ভাই আমাদের লোক। তাকে সম্মান করব না, সেটা তো হতে পারে না। গাফ্ফার চৌধুরী কেবল আওয়ামী লীগের না, আমাদের সবার।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা হয় গাফ্ফার চৌধুরীর।জানাজা পড়ান মসজিদের খতিব এমদাদা উদ্দিন। জানাজা শেষে মরহুমের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামানসহ অনেকেই অংশ নেন।
পরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাড়ে তিনটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয় গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে দাফন করা হবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে।
এর আগে যুক্তরাজ্য থেকে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহবাহী কফিন পৌঁছায়।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমানবন্দরে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার গান আমাদের উজ্জীবিত করে। এই গানের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন হাজার হাজার বছর। তিনি বিদেশ থেকেও দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তার লেখনীর মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন।’
গত ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ৮৮ বছর বয়সী গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি কয়েক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন গাফ্ফার চৌধুরী।