নাটোরে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আকারে বড় আর সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লিচু কিনতে আসছেন পাইকাররা। চাহিদা থাকায় বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে রসালো, টসটসে লিচু। অন্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম হলেও খুশি বাগানমালিকরা। আশা করছেন, এবার বেচাকেনা হবে ৩১৬ কোটি টাকা।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃীর্ণ অঞ্চলজুড়ে শত শত লিচুগাছ। মন কাড়া রঙের রসালো আর লোভনীয় মধুফল লিচু ঝুলছে গাছে গাছে। নাটোরের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলেই কমবেশি লিচুর চাষ হয়।
তবে জেলার সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয় গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর, মাহমুদপুর, মোল্লাবাজার, হামলাইকোলসহ বিভিন্ন গ্রামে। এখানকার এক হাজার লিচু পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায়। মোজাফফর, বোম্বাই আর চায়না জাতের লিচু গুণে মানে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ ট্রাক লিচু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বাগানগুলোতে লিচু প্রক্রিয়াজাত কাজে দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বাড়তি আয় করছেন।
কানু মোল্লার বটতলা এলাকার লিচুচাষি লিটন হোসেন জানান, তার প্রায় ৫০০টি লিচুগাছ আছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে লিচু কেনায় তার পরিবহন খরচ লাগেনি। এখানকার এক হাজার লিচু পাইকারি দরে তিনি বিক্রি করছেন দুই হাজার টাকায়।
মাহমুদপুর এলাকার লিচুচাষি আব্দুর রহিম জানান, নাটোরে মোজাফফর, বোম্বাই আর চায়না জাতের লিচু উৎপন্ন হয়। মোজাফফর লিচু বিক্রির শেষ পর্যায়ে। এখন অন্য দুই জাতের লিচু বিক্রি করছেন তারা।
লিচুবাগানে কাজ করা শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, ‘মৌসুমজুড়েই আমরা লিচুবাগানে কাজ করি। দিন হাজিরা ৫০০ টাকা পাই। এই দিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার ভালোভাবে চলে যায়।’
আড়তমালিক সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান, আকারে বড় আর সুস্বাদু হওয়ায় দেশজুড়ে এখানকার লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। লিচুর বাগানকে কেন্দ্র করে ২০০১ সাল থেকে বেড়গঙ্গারামপুরের কানু মোল্লার বটতলায় গড়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় লিচুর আড়ত। এ বছর লিচুর আমদানিও বেশি।
প্রতিদিনই এখানকার আড়ত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে লিচু। এবার লিচু ভালো হওয়ায় চাষিরা লিচু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। তবে একসঙ্গে সব লিচু পেকে যাওয়ায় বাজারে আমদানি অনেক বেশি হয়েছে। তাই লিচুর দাম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, জেলায় এবার সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়েছে। এ থেকে ৮ হাজার টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩১৬ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনার প্রত্যাশা করছেন তারা।