আওয়ামী লীগের সত্যিকারের নেতাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চালায় এখন সন্ত্রাসীরা। যারা সত্যিকারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে শুক্রবার বিকেলে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গত ১৮ মে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে সেখান থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসরও এভাবে বলেছিল। তাদের পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে পদ্মায় ফেলে দেয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা খসরু বলেন, ‘পদ্মা ব্রিজ থেকে নাকি বেগম খালেদা জিয়াকে ফেলে দেবে। মনে হয় বাপের টাকা দিয়ে ব্রিজ করেছে। এখানে কেউ উঠলে তাদের ফেলে দেব। আরে টাকাটা কার? ১০ হাজার কোটি টাকার ব্রিজ ৪০ হাজার কোটি টাকায় তৈরি করা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেছে। বড় বড় কথা বলার আগে উত্তর দিতে হবে।
‘আমরা জানি কোথায় গেছে। এগুলো সব বের হবে। দুবাইয়ের কোন অ্যাকাউন্টে গেছে? আমেরিকার কোন অ্যাকাউন্টে গেছে? কোন অ্যাকাউন্টে মালেশিয়ায় গেছে? সব জানি। কোন অ্যাকাউন্টে কানাডায় গেছে, কয়টা বাড়ি করা হয়েছে। সব জানি। কতগুলো প্রোপাইটি কিনেছেন? সব বের হবে।’
খসরু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি টুস করে ফেলে দেবে। এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। একটি হলো খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার চেয়ে জনপ্রিয়। যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটিয়েছেন। আপনি সেই এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের সঙ্গে বেইমানি করেছেন।’
ঋণের টাকায় পদ্মা সেতু
সরকারের উদ্দেশে খসরু বলেন, ‘পদ্মা ব্রিজের কথা বলছেন, আমরা কোনো ঋণ নিই নাই বলছেন, এই যে প্রতি বছর টাকা পরিশোধ করছেন, এটি কিসের টাকা পরিশোধ করছেন। প্রতিদিন পকেট থেকে টাকা বের করে পদ্মা ব্রিজ বানাইছেন। সব ঋণের টাকা। মিথ্যা কথা বলছেন জনগণের সঙ্গে।
‘বিশ্বব্যাংক তাদের দুর্নীতির কারণে পদ্মা ব্রিজের প্রকল্প বাতিল করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মামলা হওয়ার পরও বিচার করেনি সরকার।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে জোর করে ক্ষমতায় থাকা। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তারা জোর করে, সন্ত্রাস দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
‘আজকের সমাবেশে আসার সময় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এখন থেকে যেখানে হামলা করবে সেখানে পাল্টা আঘাত করতে হবে।’
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেওয়ার যে হুমকি দেয়া হয়েছে তা রীতিমতো হত্যার হুমকি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।’
দলের শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটে। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই সরকার মিথ্যা সাজা দিয়ে তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।’
সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি এখন রসাতলে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আর এর সঙ্গে জড়িত সরকারি দলের লোকেরা।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া ভোলা।