বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রদলের তিনজনের রক্ষাকর্তা যখন ছাত্রলীগের দুই নেতা

  •    
  • ২৭ মে, ২০২২ ১৯:১৯

দুই ছাত্রদল নেতার প্রাণ বাঁচানো ছাত্রলীগ নেতা রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেকোনো লোকের সাহায্য করা উচিত, সে যেই হোক। সে জন্যই আমি এটি করেছি, যেন বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।’ ছাত্রদল নেত্রী তন্বিকে বাঁচানো ছাত্রলীগ নেতা রাহিম সরকার বলেন, ‘সে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ করুক অথবা রাজনীতি নাই করুক, এই পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েকে হেল্প করা আমি আমার দায়িত্ব বলে মনে করি।’

গত মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির দুজন নেতা বিরোধী ছাত্র সংগঠনের তিনজনকে আরও পিটুনির হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

ছাত্রদলের এই তিন নেতার মধ্যে দুজন পুরুষ এবং একজন নারী। এর মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে হাইকোর্ট চত্বরে, একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।

ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন তাদের ফেলে পেটাচ্ছিল, তখন নিজ দলের কর্মীদের কেবল নিবৃত্তই করেননি সেই ছাত্রলীগ নেতারা, একটি ঘটনায় নিজ দলের কর্মীকে পিটুনিও দিয়েছেন। অন্য দুটি ঘটনায় পিটুনির শিকার দুই ছাত্রদল নেতাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ছাত্রলীগের আরেক নেতা।

দুই নেতা বলেছেন, অসহায় অবস্থায় পড়া যে কাউকে রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা পালন করতে পেরে তৃপ্ত।

ছাত্রলীগের দুই নেতার ভূমিকা নিয়ে ছাত্রদলের কোনো বক্তব্য নেই বলে জানিয়েছেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুরো পৈশাচিক হামলার মধ্যে ছোট এই একটা ঘটনা ঘটেছে, এটা তো কোনো বিষয় না। এটাকে হাইলাইট করা হচ্ছে দেখে আমি বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ছাত্রলীগের মধ্যে যদি নূন্যতম সহনশীলতা মানবিকতা থাকত, তাহলে তারা এই ধরনের পৈশাচিক হামলা চালাত না।’

ছাত্রদলের দুজনকে বাঁচালেন ছাত্রলীগের রাকিব

বৃহস্পতিবার, দুপুর সাড়ে ১২টা। হাইকোর্ট চত্বরের ভেতরে মাজারের সামনে স্টাম্প, বাঁশ ও পাইপ দিয়ে ছাত্রদলের এক নেতাকে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। কয়েক মিনিট ধরে এই পেটানো চলার পর দৌড়ে আসেন ছাত্রলীগের এক নেতা।

পেটাতে থাকা কর্মীদের সরিয়ে দিয়ে তিনি সেই ছাত্রদল নেতাকে মাটি থেকে তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ফের মারতে উদ্যত হলে বাধা দেন এই নেতা।

ছাত্রলীগের এই নেতার নাম রাকিব হোসেন, তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। অন্যদিকে ছাত্রদলের যাকে পেটানো হয়েছে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আজাদী।

রাকিব হোসেনের কারণে আরও মার খাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহপাঠাগার সম্পাদক ইজাবুল মল্লিকও।

ছাত্রলীগের সাত-আটজন কর্মীর উপর্যুপরি পেটানোয় গুরুতর আহত হয়ে যখন প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিলেন ইজাবুল, তখন রাবিক তার পাশে দাঁড়িয়ে রক্ষা করেন।

বৃহস্পতিবারের হাইকোর্ট চত্বরের বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে এই চিত্র দেখা গেছে।

কর্মীদের পিটুনি থেকে রক্ষা ছাত্রদল নেতা ইজাবুল মল্লিককে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন ছাত্রলীগের রাকিব হোসেন

সেদিন পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ করতে সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে তারা মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে।

ছাত্রদল প্রথমে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদল কিছুদূর অগ্রসর হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে ছাত্রদল পিছু হটে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কেউ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। কেউবা ঢুকে পড়েন হাইকোর্ট চত্বরের ভেতর।

এর পরই মূলত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাইকোর্ট চত্বরে ঢুকে তানভীর আজাদি এবং ইজাবুলকে পেটায়।

ছাত্রলীগ কর্মীরা পেটানোর সময় ছাত্রদলের তানভীর আজাদীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান ছাত্রলীগের রাকিব হোসেন

দুজনকে পেটানোর একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ভিডিওতে দেখা যায়, মারের হাত থেকে রক্ষা করে রাকিব হোসেন যখন তানভীরকে রিকশায় ‍তুলে দিতে গেছেন, সে সময় মাজার চত্বরের একটি খুপড়িতে লুকিয়ে থাকা ইজাবুল মল্লিককে বের করে ছাত্রলীগের একদল উত্তেজিত কর্মী।

এরপর তাকে মাটিতে ফেলে ১০-১২ জন কর্মী বাঁশ, লাঠি এবং স্টাম্প দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। মল্লিক মাথায় দুই হাত দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁশ-স্টাম্পের আঘাতে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।

এরপর ফের দৌড়ে আসেন রাকিব হোসেন। পেটাতে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। সে সময় রাকিবকে বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক মুজিবুল বাশারসহ বেশ কয়েকজন কর্মী সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

মারধর থেকে রক্ষা পাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ মাটিতেই পড়ে ছিলেন ইজাবুল। তিনি নড়তে পারছিলেন না। পরে রাকিব তাকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য একটা রিকশা ডেকে রিকশায় তুলে দেন।

প্রায় অচেতন হওয়ায় রিকশায় বসতে পারছিলেন না ইজাবুল। পরে স্থানীয় এক তরুণকে রিকশায় তুলে দিয়ে তার সহযোগিতায় ইজাবুলকে হাসপাতালে পাঠান ছাত্রলীগ নেতা রাকিব।

কী বলছেন রাকিব

দুই ছাত্রদল নেতার প্রাণ বাঁচানো ছাত্রলীগ নেতা রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেকোনো লোকের সাহায্য করা উচিত, সে যেই হোক। সে জন্যই আমি এটি করেছি, যেন বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আর এটি না করলে হয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটত।’

ছাত্রদল নেত্রীকে রক্ষা করা ‘দায়িত্ব ছিল’ ছাত্রলীগের রাহিমের

মঙ্গলবার দুপুরে দোয়েল চত্বরের সামনে কর্মীদের মারধরের হাত থেকে ছাত্রদলের এক নেত্রীকে রক্ষা করে প্রশংসায় ভাসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার।

সেই ছাত্রদল নেত্রীর নাম তন্বি মল্লিক। তিনি সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রাহিম সরকারই প্রথম তন্বির দিকে পাথর ছুড়ে তাকে আঘাত করেন। এরপর রাহিম সরকার দৌড়ে আরেকটু সামনে এগিয়ে যান।

রাহিমের ছোড়া পাথরের আঘাতে পড়ে গেলে ছাত্রলীগের অন্য কর্মীরা এসে তন্বিকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এরপর তাকে লাথি দিতে পেটাতে থাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

প্রথমে ঢিল ছুড়লেও পরে ছাত্রদলের তন্বিকে উদ্ধার করেন ছাত্রলীগের রাহিম সরকার

এ সময় হেলমেট পরা এক পথচারী তন্বিকে বাঁচাতে গেলে তাকেও থাপ্পড় দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে আরেক কর্মী সেখানে তাকে মারতে গেলে রাহিম সরকার তখন প্রতিহত করেন। তিনি তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ছাত্রলীগের সেই কর্মীকেই আঘাত করেন।

এরপর সেই পথচারী তন্বিকে মাটি থেকে তুললে রাহিম সরকার তাদের টিএসসির দিকে এগিয়ে দেন।

রাহিম সরকার বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে দৌড়ানো দিইনি। আরেকজনকে দিতে গিয়ে সেই মেয়েটা আমার সামনে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সেদিন যারা ক্যাম্পাসে অরাজকতা করতে আসছে, তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে দেখি একজন মেয়েকে কে বা কারা মারছিল। পরে আমি তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। তখন আমি তার পরিচয় জানতাম না।’

পরিচয় জানলে ছাত্রদল নেত্রীকে রক্ষার চেষ্টা করতেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই করতাম। সে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ করুক অথবা রাজনীতি নাই করুক, এই পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েকে হেল্প করা আমি আমার দায়িত্ব বলে মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর