পেশাদার গাড়িচালকদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তবে হবিগঞ্জে এখনও চালু হয়নি এ সেবা।
এ কারণে হবিগঞ্জে চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার গাড়িচালকসহ পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে না পারায় রাস্তায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চালকদের।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, হবিগঞ্জে ডোপ টেস্ট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বশীল মহলে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে বিআরটিএ। ৩০ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হলেও হবিগঞ্জে এখনও চালু হয়নি ডোপ টেস্ট সুবিধা।
ফলে আটকে আছে চালকদের নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন। নতুন লাইসেন্স ইস্যু করতে না পারায় রাস্তায় নামতে পারছেন না অনেক চালক। আর লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় রাস্তায় পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেককে।
হয়রানি থেকে বাঁচতে ডোপ টেস্ট সনদের জন্য যেতে হচ্ছে সিলেট কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এতে সময় ও অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি বেড়েছে ভোগান্তিও।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
বাসচালক রজব আলী বলেন, ‘হঠাৎ বিআরটিএ নিয়ম করছে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ডোপ টেস্ট লাগবে। এখন হবিগঞ্জে এই পরীক্ষা হয় না। তাহলে আমরা কী করব?
‘চার মাস ধরে লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে না। রাস্তায় নামলে পুলিশ ধরে হয়রানি করে।’
আব্দুল আহাদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসে আসছিলাম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে। এখন এসে শুনি তারা কোনো আবেদন জমা নেবে না। আগে ডোপ টেস্ট করতে হবে, পরে আবেদন নেবে।
‘হবিগঞ্জে ডোপ টেস্ট হয় না। ডোপ টেস্ট করতে সিলেট অথবা মৌলভীবাজার যাইতে হয়। এর জন্য একদিকে যেমন আমাদের দুই-তিন দিন সময় নষ্ট হবে, অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে, সেই সঙ্গে ভোগান্তি তো আছেই।’
রাজু মিয়া নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে অবিচার করছে। আমরা যারা পেশাদার ড্রাইভার তাদের ডোপ টেস্ট লাগবে, বাকিদের লাগবে না। এখন কথা হলো রাস্তায় কি শুধু আমরাই এক্সিডেন্ট করি? তারা করে না? তাহলে শুধু আমাদের বেলাই কেন ডোপ টেস্ট লাগবে?’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব আলী বলেন, ‘আমরা মাদকসেবীর তকমা নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে চাই না। আমরা ডোপ টেস্ট দিতে রাজি আছি, কিন্তু সেটা হবিগঞ্জে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। গরিব চালকরা দুই-তিন দিন সময় নষ্ট করে ভাড়া লাগিয়ে সিলেট অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে ডোপ টেস্ট করবে কেন?
‘আমি সিভিল সার্জনের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। শেষ পর্যন্ত তিনি আশ্বস্ত করেছেন আগামী সপ্তাহে হবিগঞ্জে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হবে। যদি আগামী সপ্তাহে না হয়, তাহলে আমরা কী করব, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব!’
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
বিআরটিএ হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডোপ টেস্ট সনদ না মেলায় চার মাস ধরে পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা এখন লাইসেন্স নবায়নের জন্য যে আবেদনগুলো আসছে সেগুলো নিচ্ছি।
‘যারা নতুন লাইসেন্সের জন্য যে আবেদন আসছে সেগুলো নিচ্ছি না। ইতিমধ্যে নবায়নের জন্য কয়েক শ আবেদন অফিসে জমা পড়েছে। ডোপ টেস্টের কাগজ না পাওয়ায় সেগুলো আমরা দিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘জেলায় ডোপ টেস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য চার মাস ধরে সিভিল সার্জন স্যারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। এ ছাড়া একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও মাসিক সমন্বয় সভাতেও আলাপ করেছি। এরপরও চার মাস হয়ে গেল, এখনও ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা হয়নি।
‘তবে লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার কারণে যেন চালকরা কোনো ঝামেলায় না পড়েন এর জন্য চালকদের স্লিপ দেয়া হচ্ছে। আপাতত এই স্লিপ দেখালে কোনো সমস্যা হবে না।’
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, ‘গত অর্থবছরের ক্রয় পরিকল্পনাতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ডোপ টেস্ট কিট কেনার সুযোগ নেই। তবে এই সংকট সমাধানের জন্য আমি অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এখন অধিদপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত দিলেই জেলায় ডোপ টেস্ট সম্ভব।’