বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আনারকলির ‘থাবা’ এবার স্কুলের জমিতে, শিক্ষার্থীদের অবরোধ

  •    
  • ২৬ মে, ২০২২ ১৯:২৩

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সেলিম রেজা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে রাতের আঁধারে স্কুলের জায়গা দখল করে নিয়েছেন আনারকলি। বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

রেলওয়ে ও এলজিইডির জায়গা দখলের পর এবার স্কুলের জমিতে থাবা বসিয়েছেন আনারকলি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে এবার রাতের আঁধারে রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী হওয়ার দোহাই দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে তার এই দখলদারত্বের প্রতিবাদ করেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা। স্কুলের জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুপাশে ১ ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়।

রেলওয়ে এবং এলজিইডির জায়গা দখলেও অভিযুক্ত আনারকলির গ্রেপ্তার দাবি করেছে অবরোধকারীরা।

অবরোধের মধ্যে মানববন্ধনে দশম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা ইসলাম, সাদিয়া ইসলাম মোনা, নুসরাত জাহান তিশা ও রক্সি বর্ষা আক্তার তাদের প্রতিবাদী বক্তব্য তুলে ধরে।

তারা বলে, ‘করোনার সময় স্কুল বন্ধের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আনারকলি স্কুলের জায়গা দখল করে নেন। আমরা আলোকিত মানুষ হতে চাই, রাস্তায় থাকতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ওই ছাত্রীরা বলে, ‘আপনি আমাদের মা, আমাদের স্কুলের জায়গা উদ্ধার করে দেন।’

মানববন্ধনে স্কুলের জায়গা উদ্ধার ও আনারকলির গ্রেপ্তার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড প্রদর্শন করে।

আনারকলি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অর্থ সম্পাদক। তার বাড়ি আশুগঞ্জের সোনারামপুরে। এর আগে ক্ষমতাসীন দলের পদের দাপটে আশুগঞ্জের নানা দিকে দখলের থাবা বিস্তারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

আশুগঞ্জে রেলওয়ের জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট এবং এলজিইডির রাস্তার জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে এই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। তার কর্মকাণ্ড ঠেকাতে গিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপদস্ত হতে হয়েছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা।

১৯ মে দুপুরে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহগীর আলমের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আশুগঞ্জ বাজারের মো. হারুনুর রশীদ।

অভিযোগে বলা হয়, প্রভাবশালী নেত্রী আনারকলি আশুগঞ্জের রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রেলওয়ের ১ হাজার ১৮৮ বর্গফুট জায়গা লিজ নেন মৎস্য, কৃষি ও নার্সারি করার শর্তে। তিনি লিজের শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে মার্কেট নির্মাণের জন্য জলাশয় ভরাট শুরু করেন।

গত ৩০ এপ্রিল আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধভাবে মাটি ভরাটে বাধা দেন। এ সময় আনারকলি আরও দু-তিনজনকে নিয়ে গালাগালসহ সরকারি কাজে বাধা দেন।

ওই ঘটনায় সহকারী কমিশনারের পক্ষে নাজির মনিরুজ্জামান একই দিন আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

স্থানীয়রা জানান, রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে সোনারামপুর মৌজায় ১ হাজার ১৮৮ বর্গফুট জায়গা রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নেন আনারকলি। শর্ত মৎস্য, কৃষি ও নার্সারি করার। তা না করে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে আনারকলি সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট তৈরি করছেন। পরিবেশ আইন অমান্য করে তিনি জলাশয় বালি দিয়ে ভরাট করেছেন।

১৮ মে এই অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আনারকলির তোপে পড়েন চার সাংবাদিক। তারা হলেন সময় টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যুরোপ্রধান উজ্জল কুমার চক্রবর্তী, দৈনিক ঢাকার ডাক পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হাসান জাবেদ, যায়যায়দিনের আশুগঞ্জ প্রতিনিধি সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু ও সময় টিভির ফটোসাংবাদিক জুয়েল।

ওই ঘটনায় থানায় সাংবাদিকদের করা জিডির পর সময় টিভির ব্যুরোপ্রধান উজ্জল চক্রবর্তীসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন আনারকলি।

আশুগঞ্জের রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বেদখলের অভিযোগ করেছেন সিনিয়র শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী।

তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করছি। ফোর লেনের জন্য সরকার স্কুলের জায়গা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু কেউ অবৈধভাবে সরকারি জায়গা নিয়ে যাবে তা হতে পারে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সেলিম রেজা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে রাতের আঁধারে আনারকলি স্কুলের জায়গা দখল করে নিয়েছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

সেলিম রেজা ভূমি লিজগ্রহণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বাস্তবায়ন কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক।বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আবু মুছা বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গায় প্রায় অর্ধেক ফোর লেনে চলে যাবে। কিছু জায়গা অবৈধ দখলেও চলে গেছে।’

তিনি সরকারের কাছে স্কুলের পাশের সরকারি জায়গা স্কুলের নামে স্থায়ী লিজ দেয়ার দাবি জানান।

স্কুলের জায়গা দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আনারকলি জানান, বিদ্যালয়ের পাশে তার স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি। আদালতের মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তিনি তা দখলে নিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর