পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ায় বিএনপির গায়ে জ্বালা ধরেছে বলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার যে মন্তব্য করছেন, তাকে নাকচ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, সেটিই বিএনপির গায়ে জ্বালা দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ফখরুল এই মন্তব্য করেন। এ সময় ‘পদ্মা সেতুর কারণে সারা দেশের মানুষ খুশি হলেও বিএনপি ও তাদের দোসরদের বুকে অনেক জ্বালা সৃষ্টি হয়েছে’ ওবায়দুল কাদেরের করা এমন একটি বক্তব্যের জবাব দেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সরকার তো এখন গদগদ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ এখন শুধু পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু নিয়ে বলছে। পদ্মা সেতু তো কারও পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে না। পদ্মা সেতু এ দেশের মানুষের পকেটের টাকা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।’
ফখরুলের দাবি, এই সেতু করতে লাগত ১০ হাজার কোটি টাকা। সেটা তৈরি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের গায়ে নাকি জ্বালা হচ্ছে। গায়ে জ্বালা তো হচ্ছে। গায়ে জ্বালা হচ্ছে পদ্মা সেতু বলে নয়, আমাদের গায়ে জ্বালা হচ্ছে যে, পদ্মা সেতু থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ওরা বিদেশে সম্পদ করছে, এখানেই আমাদের গায়ে জ্বালা হচ্ছে। কারণ, এটা আমাদের টাকা, আমাদের কষ্টার্জিত টাকা এবং সমস্ত মেগা প্রজেক্ট তোমরা এভাবে করছ।’
রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই মেট্রোরেল দেখছেন। মিরপুর থেকে যদি দেখেন, কিছুক্ষণ পরপর স্টেশন। এর কোনো প্রয়োজন নেই। আগারগাঁওতে একটা, তারপরে শেওড়াপাড়ায় একটা, তারপরে এসে সংসদ ভবনের ওখানে আরেকটা, এরপর ফার্মগেটে একটা।
‘এত কাছাকাছি স্টেশন পৃথিবীর আর কোথাও দেখিনি। কারণ কী? একটাই যে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। এদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি, এদের লক্ষ্য হচ্ছে লুট, এদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে লুটে নিয়ে যাওয়া।’
মেগা প্রকল্পের নামে সরকার দেশকে ‘ঋণগ্রস্ত’ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশকে ঋণের গভীরে নিয়ে গেছে। আমরা বুঝতে পারছি না, আমরা চাকচিক্য দেখে অনেকে মনে করছি কত কী?...।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংকট আমাদের বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট। আমরা যদি এটাতে জয়যুক্ত না হতে পারি আমাদের গণতন্ত্র বলুন, আমাদের অর্থনীতি বলুন, আমাদের সমাজ বলুন, আমাদের ভবিষ্যৎ বলুন সবকিছু ধবংস হয়ে যাবে। এদের প্রতিরোধ যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের রাষ্ট্রের জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারব না।’
ফখরুল বক্তব্য রাখছিলেন ‘কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। জিয়া পরিষদ নামে একটি সংগঠন বইটি প্রকাশ করেছে। আব্দুল কুদ্দুসের লেখা বইটির দাম ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, এম সলিমুল্লাহ খান, আবদুল লতিফ মাসুম, মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান হাওলাদার, আবু জাফর খান, কামরুল আহসান, এমতাজ হোসেন, আবদুল্লাহ হিল মাসুদও বক্তব্য রাখেন।