যমুনা নদীতে এ পর্যন্ত আটবার তলিয়েছে হালিমা খাতুনের বাড়ি। এবারও বাড়ি হারালে রাস্তায় থাকা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার পাকরুল গ্রামের হালিমা বলেন, ‘বাবা, আমি এই পর্যন্ত আটবার বাড়ি ভাঙা দিছি। এবার আমার বাড়ি নদীতে ভাঙলে মরণ ছাড়া আর উপায় নাই। রাস্তাত যায়ে থাকন লাগব। পুলাফান (ছেলেমেয়ে) নিয়ে রাস্তায় থাকার চেয়ে মরাই ভালা।’
যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে পাকরুল গ্রামের এক কিলোমিটারজুড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদীর গর্ভে একে একে বিলীন হচ্ছে বাড়ি, দোকান, ফসলের ক্ষেত। নিজেদের বসতভিটা হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন পারের হাজারও বাসিন্দা।
পাকরুল গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময় নদীর পাড় ভাঙে। নদীর পানি বাড়তে শুরু করলেই ভাঙন শুরু হয়। কত বাড়ি যে ভাঙল তার হিসাব নাই। কত মানুষ যে ডাহা (ঢাকা) গেল, নারায়ণগঞ্জ গেল! এইভাবে ভাঙলে আমারও ডাহা যাওন লাগব।’
পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন পাকরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ ফুট দূরত্বে চলে এসেছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে স্কুলের ভবন। নিয়ম অনুযায়ী আসবাবগুলো তোলা হবে নিলামে।
এই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত শিহাব আকন্দ। স্কুল ভেঙে ফেলায় মন খারাপ তার।
শিহাব বলে, ‘আঙ্গর (আমাদের) প্রিয় স্কুলটা ভাইঙ্গা ফালাইতেছে। আঙ্গর খুব খারাপ লাগতাছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, তিন বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তারা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত তিনডে বছর ধইরে নদী ভাঙতাছে। আইজ পর্যন্ত এডা (একটা) সরকারি লোক কোনো ব্যবস্থা নিল না।’
ফজর মিয়া বলেন, ‘জামালপুরে এত উন্নয়ন হইতাছে। আঙ্গর এই জায়গায় নদী ভাইঙ্গে সব নিয়ে গেল গা। একটা জিও ব্যাগ ফালাইল না। আমরা কী দোষ করছি?’
এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে সরিষাবাড়ী পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারজুড়ে নদীর তীর রয়েছে। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার তীর রক্ষার কাজ শেষ হয়েছে, ছয় কিলোমিটারের কাজ চলছে।
‘বাকি অংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সমীক্ষা শেষে প্রয়োজনীয় এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের প্রকল্প জমা দেয়া হবে। প্রকল্প পাস হলেই কাজ শুরু হবে।’
পাউবোর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যমুনার পানি বাড়ায় মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল এলাকার এক কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এত বড় এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা সম্ভব না। জিও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও কাজ হবে না। তাই সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ওপর নির্ভর করতে হবে।’