বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাজার বছর আগে কারা ছিল এখানে

  •    
  • ২৬ মে, ২০২২ ০৮:২৪

খুলনা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮০ মিটার প্রস্থজুড়ে খননকাজ হয়েছে। সমতল থেকে মাটির প্রায় ৭ ফুট গভীরে খনন করা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

টেরাকোটা, মূর্তি, মাটির তৈরি বড় কড়াইয়ের আংটা, কড়ি, চাল, ইটের মতো আরও অসংখ্য নিদর্শন একে একে বেরিয়ে এসেছে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের রেজাকপুর গ্রামে প্রত্নতাত্তিক খননের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে হাজার বছরের পুরোনো এসব নিদর্শন।

গত ১২ মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই খননকাজ চলে। খননে বেরিয়ে আসা প্রত্নতাত্ত্বিক ওই স্থানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘কপিলমুনি ঢিবি’।

খননকাজে নিয়োজিত দলটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা।

তিনি বলেন, ‘রেজাকপুর গ্রামে আমরা যে নিদর্শনগুলো পেয়েছি, ধারণা করা হচ্ছে তা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ বছরের পুরোনো।’

তিনি জানান, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা অঞ্চলে আগেও অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেসব নিদর্শনের সঙ্গে কপিলমুনি ঢিবির নিদর্শনের অনেক মিলও রয়েছে। বিশেষ করে যশোর জেলার কেশবপুরের ভরতভায়নার নিদর্শনের সঙ্গে অনেক মিল। সেখানকার ইটগুলোর সঙ্গে কপিলমুনিতে পাওয়া ইটগুলোর খুবই সাদৃশ্য রয়েছে।

খুলনা শহর থেকে সড়কপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮০ মিটার প্রস্থজুড়ে খননকাজ হয়েছে। সমতল থেকে মাটির প্রায় ৭ ফুট গভীরে খনন করা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

ওই ঢিবিতে একটি বর্গাকার স্থাপত্যকাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্গাকার এই স্থাপনার চারপাশে দেয়ালঘেরা একটি প্রদক্ষিণ পথও রয়েছে।

এখানে পাওয়া বিভিন্ন মাটির পাত্র ও পাত্রের ভাঙা অংশের মধ্যে হাঁড়ি, কলস, বাটি, থালা, বদনা, কড়াই, প্রদীপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পোড়ামাটির ফলকের ভাঙা অংশ, পোড়ামাটির প্রতিমার ভগ্নাংশ, অলঙ্কৃত ইট, কড়িসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণও পাওয়া গেছে।

বর্গাকার স্থাপত্যকাঠামোর উত্তর-পশ্চিম কোণ ও উত্তর-পূর্ব কোণের প্রদক্ষিণ পথের বাইরের দেয়ালসংলগ্ন মাটিতে মিশ্রিত অবস্থায় এক ধরনের কালো রঙের চাল পাওয়া গেছে। একে পোড়া চাল বলছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

এই চাল নিয়ে গবেষণা করলে এখানকার প্রাচীন আমলের ধানের প্রজাতিসহ প্রকৃতি-প্রতিবেশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে বলে তাদের ধারণা।

এই ঢিবি এলাকা এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। বহুকাল ধরেই স্থানীয়রা এখানকার টালিসদৃশ বিশেষ ইট নিজেদের কাজে ব্যবহার করেছেন।

কপিলমুনি ও সংলগ্ন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার একাধিক জায়গায় এমন আরও ঢিবি রয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এখানে আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে।

তবে হাজার বছর আগে এই অঞ্চলটিতে কারা বসবাস করেছিল, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আফরোজা খান মিতা বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত না হওয়া গেলেও যেসব স্থাপনা ও নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে- সেখানে এমন কোনো জনগোষ্ঠী ছিল যাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের নিবিড় সংযোগ ছিল।’

সুন্দরবনসংলগ্ন এই অঞ্চলে বহুদিন আগে থেকেই মানুষের বসতি বলে ধারণা করা হয়। মহাকাব্য রামায়ণে কপিলেশ্বর মুনি ও বিশাল জলাভূমি বনের উল্লেখ রয়েছে।

এ ছাড়া সতীশচন্দ্র মিত্রের শত বছরের পুরোনো গ্রন্থ ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’-এ কপিলমুনিতে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এই এলাকায় একাধিক ঢিবি থাকার কথাও অনেকে জানিয়েছেন।

অতীতে একটি পুকুর খননের সময় এই অঞ্চলে একটি বুদ্ধ প্রতিমা পাওয়া গিয়েছিল। আর কপিলমুনি বাজারের মন্দিরে থাকা বিষ্ণু মূর্তিটিও ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কপিলমুনি ঢিবিতে খনন শুরুর পর থেকে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, গবেষকসহ বিদেশি প্রতিনিধিদলও ঘুরে গেছেন।

স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে অনুসন্ধিৎসু পাঠক, আইনজীবী বিপ্লব কান্তি মণ্ডলও কিছুদিন পর পর ওই খননস্থলটিতে ঘুরতে যান। তিনি বলেন, ‘অনেক পরে হলেও রেজাকপুরে খননকাজ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একটি যথাযথ কাজ করেছে। তবে এই খননকাজটি আরও অনেক বিস্তৃত হওয়া উচিত। এত দিনে অনেক নিদর্শন হারিয়ে গেছে। যা আছে, তা রক্ষা করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর