ঢাকা থেকে টরন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরে স্টপওভারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে স্টপওভার বা টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টেকনিক্যাল ল্যান্ডিং বা স্টপওভারের জন্য আমরা ম্যানচেস্টার ঠিক করেছিলাম। কিন্তু পরে সেখান থেকে ই-মেইলে জানিয়েছে, আমাদের বিমান সেখানে যে টার্মিনালে নামবে সেটা থেকে আরেক টার্মিনালে নিয়ে তাদের সিকিউরিট চেক করা হবে। বাসে করে নিয়ে আবার তাদের সিকিউরিটি চেক করে এই টার্মিনালে নিয়ে আসবে, তাদের লাগেজ আলাদাভাবে চেক করবে।
‘এতে অনেক সময় লাগবে এবং একটা ভোগান্তি। এতে করে তো মানুষ একবার গেলে আরেকবার যেতে আগ্রহী হবে না। এজন্য আমরা এটা পরিবর্তন করেছি। এখন আমরা স্টপওভার করব ইস্তাম্বুলে।’
এই রুটটিতে সরাসরি ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত নিরাপত্তার সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘টরন্টো আমরা সত্যিকার অর্থে সরাসরি ফ্লাইট করতে চাই। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে আমরা এখন রাশিয়ার এয়ারস্পেস ব্যবহার করতে পারছি না।
‘এই এয়ারস্পেসটা যেদিন থেকে ব্যবহার করতে পারব সেদিন থেকেই আমরা সরাসরি টরন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনা করব, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
বিমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুন থেকে এই রুটে ফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। খুব শিগগিরই রুটটিতে ফ্লাইট শুরুর তারিখ ও টিকিট বিক্রির ঘোষণা হবে বলেও জানান বিমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এর আগে, গত ২৬ মার্চ টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭০ যাত্রী নিয়ে উড়াল দেয় বিমানের প্রুভেন (পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক) ফ্লাইট। ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে টানা সাড়ে ১৮ ঘণ্টা আকাশে থেকে কানাডায় পৌঁছায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে একটানা এতক্ষণ আকাশে ওড়ার নজির আর নেই। বিশ্বেও এমন নজির খুব কমই রয়েছে। মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, এটি যাত্রী নিয়ে কোনো সেভেন এইট সেভেন উড়োজাহাজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একটানা ওড়ার রেকর্ড।
ঢাকা থেকে আকাশপথে টরন্টোর যে দূরত্ব, এটিকে এভিয়েশনের পরিভাষায় বলা হয় ‘আল্ট্রা লং হওল’। বিশ্বে এই ধরনের গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চলার নজির খুব বেশি নেই।
এয়ারলাইনসগুলো সাধারণত তৃতীয় কোনো গন্তব্যে স্টপওভার করেই ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর একটি বড় কারণ, এ ধরনের দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে উড়োজাহাজে পর্যাপ্ত জ্বালানি বহন করতে হয়। বাড়তি জ্বালানি বহন করার কারণে উড়োজাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কমিয়ে রাখা হয় যাত্রীসংখ্যা। এভিয়েশনের পরিভাষায় এটিকে বলে লোড পেনাল্টি।
ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৬ ঘণ্টা। এই রুটে বিমান ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এই উড়োজাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ অন্যগুলোর চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম। আর এ কারণে এগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে একটানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে উড়তে পারে।
সাড়ে ১৮ ঘণ্টা উড়াল দিয়ে বিমানের যে উড়োজাহাজটি টরন্টোয় গিয়েছিল, এই পথ পাড়ি দেয়ার জন্য সেটিতে বহন করা যেত সর্বোচ্চ ১৪০ যাত্রী। অথচ বিমানের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৯৮ জন।
১৬ ঘণ্টায় টরন্টো পৌঁছানোর রুট ব্যবহার করে যদি এই উড়োজাহাজটি দিয়ে সরাসরি টরন্টো ফ্লাইট করা হতো, তাহলে সেখানে সর্বোচ্চ বহন করা যেত ২৩০ যাত্রী।
ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে চেষ্টা বেশ কয়েক বছর ধরেই চালিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল পুরোদমে শুরু হলে এয়ারলাইনসটি তার বহরে থাকা লম্বা পাল্লার উড়োজাহাজগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ও চারটি বোয়িং ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।
লম্বা দূরত্বের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চালু রয়েছে শুধু লন্ডন রুটে। এ রুটে সরাসরি যেতে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।
বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা কোনো এয়ারলাইনসেরই ঢাকা থেকে টরন্টোয় সরাসরি ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, নারিতা ও টরন্টোয় ফ্লাইট শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী তারা পাবে।