সালেক মিয়ার পায়ে ঘা হয়ে গেছে। তাতে খুব চুলকানি হয়। সালেকের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নে। পাঁচ-ছয় দিন পানিতে তলিয়ে ছিল তার বাড়ি। তবু বাড়ি ছেড়ে যাননি। পানিতে থাকতে থাকতেই পায়ে ঘা হয়ে গেছে তার।
সালেক বলেন, ‘কেবল আমার নয়, আমাদের বাড়ির আরও কয়েকজনের এমন হয়েছে, বাচ্চাদের হাতে-পায়ে ফোঁড়া উঠেছে। তাতে চুলকানি লেগেই থাকে।’
নগরের ছড়ারপাড় এলাকার একটি বস্তিতে থাকেন সুনাফর আলী। তার চার সদস্যের পরিবারের সবার ডায়রিয়া।
সুনাফর আলী বলেন, ‘এই কদিনে পচা পানির মধ্যে ছিলাম। খাওয়ার পানিও পাইনি। এখন পানি নামলেও বাসার সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে বাড়তে শুরু করেছে পানিবাহিত রোগ। বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পানি কমলে রোগবালাই আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। তবে আক্রান্ত বেশির ভাগই এখন পর্যন্ত বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ এখনও তেমন বাড়েনি।
আক্রান্তরা বাসায় চিকিৎসা নেয়ায় রোগীর সঠিক তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। নগরের অনেকে আক্রান্ত হলেও সিটি করপোরেশনের কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বন্যাপরবর্তী রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জেলায় ১৪০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। আর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরে গঠন করা হয়েছে আরও তিনটি মেডিক্যাল টিম।
সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগ বেড়েছে। আমাদের হিসাবে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় সাড়ে ৪০০ লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চর্মরোগে ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েকজন। গোয়াইনঘাট উপজেলায় রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
‘পানিবাহিত রোগ যাতে না ছড়াতে পারে এ জন্য আমাদের মেডিক্যাল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়ও কাজ করছে। তবে বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।’
কোন উপজেলায় কতটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে তাও পরিষ্কার করেছেন এই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম থাকছে। এর বাইরে জেলা সদরে ৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।’
‘এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিক্যাল টিমকে নির্দেশনা দেয়া আছে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ, ‘পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা থাকে। তবে এ জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, একই সঙ্গে নগরের রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সিলেট সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
পচা ও দুর্গন্ধ যুক্ত পানি কারণে চর্মরোগ ও ডায়রিয়া বেশি ছড়াতে পারে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিক্যাল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। এ ছাড়া নগরে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিউজবাংলা বলেন, ‘পানি পুরো নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’