বর্ষা না আসতেই টাঙ্গাইলে যমুনায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হচ্ছে বিলীন। ঘরহারা পরিবারগুলো পরিচিতজনদের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে।
অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, ঈদগা মাঠ ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারায় অসংখ্য পরিবার। এ বছর অসময়ের ভাঙনে দিশেহারা কালিহাতী, গোপালপুর, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী লোকজন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া ইউনিয়ন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুনের হিসাবে, সদরে এক সপ্তাহে ৩০০ একর আবাদি জমি ও অন্তত ৪০০ বসতঘর যমুনায় হারিয়েছে।
কাকুয়া ইউনিয়নের কলেজছাত্রী পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘বাবা-মা সব সময় চিন্তায় থাকে, কখন না জানি নদীতে বাড়ি ভেঙে পড়ে যায়। সব সময় এই চিন্তা নিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়। এই কয়েক দিনে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।’
একই ইউনিয়নের মো. সাইফুলের অভিযোগ, মাঝে মাঝে কর্তৃপক্ষ নদীর পারে কিছু কাজ করে। তবে সেগুলো ফের ধসে যায়।
তিনি বলেন, ‘জানি না কী করে তারা। আর সব ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হয়।’
সদরের চর পৌলীর কাঠমিস্ত্রি মো. সাব্বির বলেন, ‘কতবার বাড়ি সরাব? আর তো পারতেছি না। প্রতিবার বন্যা আসলেই বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। আমরা এর স্থায়ী প্রতিকার চাই।’
কালিহাতীর বেলটিয়া গ্রামের ৫০ বছরের রাহেলা খাতুন বলেন, ‘এই নিয়ে ছয়বার বাড়ি নতুন করে করলাম, তাও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। সরকারের লোকজন আসে ১০ কেজি চাল দিতে। আমরা চাল চাই না, বাঁধ চাই।’
দ্রুতই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর আসনের সাংসদ সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাঁধ তৈরির জন্য প্রকল্প একনেকে পাস হয়ে গেছে। এখন শুধু টেন্ডার বাদ আছে। আশা করছি আগামী শুকনো মৌসুমে বাঁধের কাজ শুরু করতে পারব।’
এ আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামও।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন জানান, অন্যান্য উপজেলার তুলনায় সদরেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেয়া হয়েছে।