বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আগুন দিয়ে জুমভূমি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ

  •    
  • ২৫ মে, ২০২২ ০১:০৭

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪০০ একরের অধিক জুমভূমি এবং ফলদ বাগান আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। তিন সংগঠন ১৪ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।’

বান্দরবানের লামায় আগুন লাগিয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জুমভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন পার্বত্য অঞ্চলকেন্দ্রিক একাধিক সংগঠন।

চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ভুলন ভৌমিক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪০০ একরের অধিক জুমভূমি এবং ফলদ বাগান আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ।

‘চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ’, ‘হিল কালচারাল ফোরাম’ ও ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’- এই তিন সংগঠন মিলে ১৪ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ভুলন ভৌমিক বলেন, ‘পাহাড় পুড়িয়ে দেয়ায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে লাংকম পাড়ার ১২ পরিবারের ৭০ জন, জয়চন্দ্র পাড়ার ১৬ পরিবারের ৮৭ জন এবং রেঙয়েংপাড়ার ১১ পরিবারের ৬৮ জন রয়েছে৷ তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে এসব পাহাড়ে ভোগদখলীয় জমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৩-৯৪ সালে লামার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি ও সরই মৌজায় মোট ৬৪ জনকে ২৫ একর করে মোট এক হাজার ৬০০ একর জায়গা রাবার চাষের জন্য ৪০ বছরের জন্য ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ সময় ইজারাদারদের ২৮টি শর্ত দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ইজারা চুক্তির ১০ বছরের মধ্যে বাবার বাগান সৃজন না করলে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে।

‘কিন্তু ২৯ বছর পর এসে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪০০ একর জুমভূমি ও ফলদ বাগান দখলের চেষ্টা করছে, যা আইনবহির্ভূত ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত অভিযোগ তুলে ধরে পার্বত্য অঞ্চলকেন্দ্রিক একাধিক সংগঠন। ছবি: নিউজবাংলা

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আগুনে লক্ষাধিক ফলদ ও বনজ চারা, ৭ একর ধানি জমি ও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশ বাগান পুড়ে গেছে। অথচ এসবই ওই এলাকার মানুষের জীবিকার মাধ্যম।

‘গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ১৭০ থেকে ২০০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ৪০০ একর বনের গাছপালা কেটে পরিষ্কার করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে বন কাটায় বাধা দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে ভয় দেখায়। গাছ-গাছালি কাটার পর ২৬ এপ্রিল জুমে আগুন দেয় তারা। এতে ৩৯টি পরিবার চরম খাদ্য সংকটে পড়ে।’

রাবার কোম্পানির লোকজনের ভয়ে তিন পাড়ার মোট ৩৫ জন শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন ভুলন ভৌমিক।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম চাষের ৪০০ একর ভূমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগুনে ক্ষতিগ্ৰস্ত ফলদ ও বনজ বাগান, ধানের খেত এবং শ্মশানভূমির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।

এ ছাড়া ভূমি দখলদারদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা বিতরণসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সহযোগিতা দিতে হবে, আতঙ্কিত পাড়াবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ম্রো ও ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক কামাল উদ্দিন এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই এলাকাটি ১৯৯৩ থেকে ৯৫ সালের মধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে আমরা কয়েকজন মিলে ইজারা নিয়েছিলাম। পরে কাজের সুবিধার্থে সবাই মিলে একটি কোম্পানি করেছি। আমরা লিজ নেয়ার পর ওই পাহাড়ে রাবার বাগানও করেছিলাম। তবে ২০১৬ সালে সেই বাগান কারা যেন পুড়িয়ে দেয়।

‘এরপর আশপাশ ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ওরা এসে সেখানে ঘর করে। আমরাও বাধা দেইনি। ভেবেছিলাম আমাদেরও শ্রমিক দরকার, তাদের হয়তো কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু পরে দেখি তারা ওটা নিজেদের বলে দাবি করছে। ওরা যেসব অভিযোগ করছে সেসব মিথ্যা। তাদের ভয় দেখানো বা রোহিঙ্গা দিয়ে কাজ করানো, শিশুদের স্কুলে যেতে না দেয়া সব মিথ্যা। স্কুল তো তাদের পাড়াতেই, আমরা কেন স্কুলে যেতে দেব না?

‘ঘটনাটি অনেকেই তদন্ত করেছেন। এসিল্যাড রিপোর্ট দিয়েছেন, সব আমাদের পক্ষে। আমাদের ধারণা, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বন্ধ করতে কোনো মহল তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর