কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির প্রস্তাব করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।
নিজ বাসভবনে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কায়সার এ আবেদন জানান।
নির্বাচনসংক্রান্তে সাত দফা প্রস্তাব কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান এই মেয়র পদপ্রার্থী।
লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একজন প্রার্থী। নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে পদচারণ করে আমি সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, পেশাজীবী নেতারা ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিবেচনা ও কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পেশ করছি।’
প্রস্তাবগুলো হলো
১. ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ইউপি ও পৌর নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। দিনের ভোট রাতে, কেন্দ্রদখল ও ভোটারশূন্য কেন্দ্র ছিল, যা ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করলেও বোঝা যায়।
জনগণের মধ্যে এখনও সেই ভয়, আতঙ্ক ও সন্দেহ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে কিছু মোটরসাইকেল আটক ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের ভয় ও শঙ্কামুক্ত পরিবেশে ভোটারদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২. ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও এ বিষয়ে আপত্তি তোলার পাশাপাশি ভোটের ফলাফল পাল্টিয়ে দেয়া হবে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা, ব্রিফিং কিংবা বিস্তারিত কিছুই তুলে ধরেনি। তাই আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানি না। যেহেতু বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, তাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
৩. নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য আমি অভিনন্দন জানাই। সেই একই কারণে সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক, পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপার ও মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নির্বাচনকালীন (প্রতীক বরাদ্দের পূর্বেই) বদলির দাবি জানাচ্ছি।
৪. নির্বাচন কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগকেও আমি স্বাগত জানাই। সিসি ক্যামেরার সুবিধা যাতে আগ্রহী প্রার্থীরা পায়, অর্থ্যাৎ প্রার্থীরা তাদের স্বঅবস্থানে থেকে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে পারে সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
৫. নির্বাচনের সময় পর্যন্ত আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
৬. প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচন কমিশনের দুজন সদস্যের নেতৃত্বে কয়েকটি দল কুমিল্লায় অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রার্থীদের অভিযোগ হোয়াটস আ্যাপ, টেলিগ্রাম, ম্যাসেঞ্জারসহ অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নির্বাচনের আগেই ইভিএমের কথা উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন, তাহলে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর বাতিল কেন চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমার মনে সন্দেহ রয়েছে। ইনপুট যা দেন আউটপুট সঠিক নাও আসতে পারে। এ ছাড়া ভোটার ও সুশীল সমাজ ইভিএমের ওপর এখনো আস্থা আনতে পারেনি। আমিও না। তাই ইভিএম বাতিল চেয়েছি।’