দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন বাতিল হওয়ায় আবারও কারাগারে যেতে হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ওই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানিতে সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে তার জামিন চান।
শুনানিতে আইনজীবী সমাজী বলেন, ‘এর আগে ১১ মে আদালত থেকে তিনটি শর্তে সম্রাট জামিন পেয়েছিলেন। তা হলো- দেশত্যাগ করতে পারবেন না, পাসপোর্ট জমা দেবেন, চিকিৎসার বিবরণ ও চিকিৎসা সনদ জমা দেবেন।’
সম্রাটের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (সম্রাট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের সিসিইউ থেকে উচ্চ আদালতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি মুক্ত বাতাসে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলেন না। তার চিকিৎসায় ৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তিনি ওখানকার চিকিৎসকদের মুচলেকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছেন।
‘চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন যে শরীরের এ অবস্থায় তার ছোটাছুটি করা উচিত নয়। জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। তার জন্য চিকিৎসকরা দায়ী থাকবেন না। মুচলেকা নিয়ে তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা এই প্রথম। দুদক এই জামিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন করে। হাইকোর্ট তার জামিন বাতিল করলে আমরা আপিল বিভাগে চেম্বার জজের কাছে যাই। ৩০ মে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
‘আমরা যেন প্রেজুডিস না হই আবার উচ্চ আদালতের আদেশেরও যেন বরখেলাপ না হয়- এ রকম একটি আদেশ এই বিচারিক আদালত থেকে চাই।’
এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বক্তব্য শুনলাম। আমরা জামিন আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে হাইকোর্ট বলেন যে রং কনসেপশন অফ ল’। নিম্ন আদালতে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল তা ফ্রেশ নয়, অনেক আগের।’
দুদক আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে সমাজী বলেন, ‘জাজমেন্টের বাইরে কোনো কিছু বলা সমীচীন নয়।’
এই পর্যায়ে কাজল হাইকোর্টের আদেশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘জামিনের বিষয়টি আপিল বিভাগে পেন্ডিং। সুতরাং এ মুহূর্তে জামিন নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। জামিনের বিষয়ে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ সিদ্ধান্ত দেবে, এই আদালত নয়।’
এ সময় বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের (দুদক) কাছে জানতে চান- তাহলে বর্তমানে আসামির স্ট্যাটাস কি? উত্তরে কাজল বলেন, ‘এখানে আমাদের আর কিছু করার নেই। আসামি জেলহাজতে যাবে।’
এ সময় সমাজী বলেন, ‘তাহলে যে হাসপাতাল থেকে সম্রাট আদালতে এসেছেন সেখানে ডাইরেকশন দেয়া হোক।’
এই পর্যায়ে ১৫ মিনিট পর আদেশ দেয়া হবে জানিয়ে আদালত মুলতবি করেন বিচারক।
১৫ মিনিট পর বিচারক খাস কামরা থেকে এজলাসে আসন নিয়ে হাজতি পরোয়ানামূলে সম্রাটকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিচারক আদেশে বলেন, মামলার ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নেই। এ মামলায় পরবর্তী তারিখ ৯ জুন জামিন ও অন্যান্য শুনানি হবে।
একই আদালত এর আগে ১১ মে তিন শর্তে সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করে। ১৬ মে দুদক সম্রাটের জামিন বাতিলের আবেদন করে উচ্চ আদালতে। ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন বাতিল করে। একইসঙ্গে তাকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিচারককেও সতর্ক করে হাইকোর্ট।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।