বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাত বদলে সবজির দাম তিন গুণ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ মে, ২০২২ ১৮:৩৮

মিরাশার চাষিবাজারের সভাপতি আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, ‘কৃষকরা পণ্য কোনো ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন, সেখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা সংগ্রহ করেন। পাইকাররা সেই সবজি বিভিন্ন হাটবাজারের আড়তে বিক্রি করেন। আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা তা ক্রয় করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক দফা হাত বদলের কারণে সবজির দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে যায়।’

শরীয়তপুরের জাজিরার মিরাশার বাজারে কৃষকের উৎপাদিত ফসল সরাসরি বিক্রি করা হয়। জেলার অন্যতম বৃহৎ এই পাইকারি সবজির বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকা দরে। ওই মিষ্টি কুমড়াই পাইকারি বাজারটি থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়।

শুধু মিষ্টি কুমড়াই নয়, কৃষকের উৎপাদিত প্রায় সব সবজিই দুই থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে সবজি কেনার পর মধ্যস্বত্বভোগীদের তিন-চার দফা হাত বদলের কারণে দাম কয়েক গুণ বাড়ে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা শহরসহ আশপাশের অন্তত ১২টি সবজির বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কৃষক পর্যায়ে দাম কম থাকলেও ভোক্তা পর্যায়ে কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

কৃষক মাঠে ফসল ফলিয়ে ন্যায্যমূল্য না পেলেও অতিরিক্ত মুনাফায় পকেট ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। ক্রেতারা বলছেন, নজরদারির অভাবে ইচ্ছেমতো দাম নেয়া হচ্ছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি মনিটরিং প্রয়োজন।

তবে প্রশাসন বলছে, কৃষকের সঙ্গে সরাসরি ভোক্তার সংযোগ না থাকায় কৃষকের পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে কয়েক হাত বদলের কারণে দাম বৃদ্ধি পায়। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত সবজি সঠিক দামে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রির জন্য ২০০৭ সালে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জাজিরার মিরাশার এলাকায় একটি কৃষি বাজার স্থাপন করা হয়। জাজিরা ও নড়িয়ার স্থানীয় কৃষকরা ওই বাজারে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে থাকেন। ওই বাজার থেকে রাজধানী ঢাকা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে পাইকাররা সবজি সংগ্রহ করেন।

সোমবার মিরাশার কৃষি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ২০ থেকে ২২ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১১ থেকে ১৩ টাকা, টম্যাটো ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, উস্তা ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ জেলা শহরের পালং বাজার, আঙ্গারিয়া বাজার, কোর্ট বাজারসহ আশপাশের বাজারে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে। প্রতিটি বাজারেই বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, টম্যাটো ৯০ থেকে ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ৮৫, উস্তা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া পাইকারি বাজারে শসা ১৫ টাকা বিক্রি করা হলেও‌ খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫ হতে ৩০ টাকা দরে। ঝিঙে পাইকারি ২৫ টাকা, খুচরা বাজারে তা ৪৫ টাকা। কাঁচা কলা প্রতি হালি ১০ থেকে ১২ টাকা, খুচরা বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ধনেপাতা প্রতি কেজি ৭০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের ডুবিসায়বর গ্রামের কৃষক ইউনুস মাদবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া করেছি। মিরাশার বাজারে ৭ টাকা কেজি দরে ১৩৫ কেজি কুমড়া বিক্রি করেছি। এ দামে উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন খরচও উঠবে না। এভাবে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে সবজি উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে।’

নাওডোবা ইউনিয়নের মাদবর কান্দি গ্রামের সুরুজ মাদবর ৮৫ টাকা কেজি দরে ১২০ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করে হতাশ। মিরাশার বাজারেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুরুজ মাদবরের। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঋণের টাকায় ফসল ফলাই। কিন্তু বিক্রির সময় কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের এই সবজিই হাটবাজার দুই-তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে দেখে হতাশ হই। আমাদের বিষয়ে ভাবার কেউ নাই।’

জেলা শহরের পালং বাজারে সবজি ক্রয় করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শান্তিনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সবুজ বেপারী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ পাইকারি বাজারে এসব সবজির দাম ২ থেকে ৩ গুণ কম। এতে করে কৃষককে ঠকানো হচ্ছে। মাঝখান থেকে সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি মনিটরিং করার দাবি জানাই।’

জেলা শহরের পালং বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মুন্না বলেন, ‘আমরা এখানকার আড়ত থেকে সবজি কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। আমরা সীমিত লাভে সবজি বিক্রি করি। এখানে আড়তদাররা কী দামে সবজি কেনে তা আমরা বলতে পারব না। কৃষকের সবজি কয়েক হাত বদল হয়ে খুচরা পর্যায়ে আসতে আসতে দাম কয়েক গুণ বাড়ে। এতে ক্রেতারা অনেক সময় আমাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। কিন্তু আমাদের তো কিছুই করার নেই।’

মিরাশার চাষিবাজারের সভাপতি আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, ‘কৃষকরা পণ্য কোনো ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন, সেখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা সংগ্রহ করেন। পাইকাররা সেই সবজি বিভিন্ন হাটবাজারের আড়তে বিক্রি করেন। আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা তা ক্রয় করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক দফা হাত বদলের কারণে সবজির দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে যায়।’

শরীয়তপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কৃষকের সঙ্গে সরাসরি ভোক্তার সংযোগ নেই। কৃষকের পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে অন্তত চার হাত বদল হয়। ফলে প্রতি ধাপে এর দাম বৃদ্ধি পায়। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত কৃষকের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতার সংযোগ স্থাপনের জন্য। তাহলে কৃষকও ন্যায্যমূল্য পাবেন, আবার ভোক্তাও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন।’

শরীয়তপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী বলেন, ‘পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রির সামঞ্জস্য থাকতে হবে। সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ উপায়ে অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর