মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে চললে মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সচিবালয়ে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর মান উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মাদক বিস্তার রোধে মদের বিষয়ে সরকার নমনীয় হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা হলো সফট ড্রাগস আরেকটি হলো হার্ড ড্রাগস। সফট ড্রাগস সারা বিশ্বেই চলছে। আমাদের এখানেও লাইসেন্সের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে, কয়েকটি হোটেল-রেস্টুরেন্ট-ক্লাবকে লাইসেন্স দিয়েছি। তারা শর্ত মেনে চলছে… যারা শর্ত মানছে বা মেনে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের লাইসেন্স দিচ্ছি।
‘আওতা বাড়বে কি না এটা নির্ভর করে তারা আমাদের নিয়মকানুন কতটা মেনে চলতে পারছে বা পারবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যারাই আমাদের নিয়ম মেনে চলতে পারবে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া আছে, যখন সেগুলো ফুলফিল করতে পারবে তখন তারা লাইসেন্স পাবে।’
সুরা নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আইন যখনই প্রয়োজন হয় তখনই সেটা ব্যবহার করা হয়। এখন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি আইন রয়েছে, সেখানে প্রয়োজনে আমরা ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এখনই আমরা মনে করছি না সেটার প্রয়োজন হচ্ছে।’
মাদক প্রতিরোধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকে আসক্ত হলে সবকিছু হারিয়ে ফেলে। তাই মাদক প্রতিরোধ ও নিরাময়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা আছে। মাদকের চাহিদা নিরসন ও সাপ্লাই বন্ধে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। পাশের দেশ ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কারণে ফেনসিডিল সাপ্লাই কমেছে। তবে ভয়ংকরভাবে ইয়াবা আসছে। তরুণরা এতে বেশি আসক্ত হচ্ছে।’
মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৩৬ লাখ মাদকাসক্ত আছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, তবে মাদকাসক্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
মাদকে শুধু জনপ্রতিনিধিরা জড়িত নন, সব পেশার কিছু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলে মাদক প্রতিরোধ করতে হবে।
মাদক নিরাময় কেন্দ্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘৩৬২টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো মানসম্পন্ন নয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তার ঢাকায় একটি কেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছে। যশোরেও এ রকম একটি ঘটনা আছে।
‘আবার অনেক নিরাময় কেন্দ্র ভালো কাজ করছে। ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। আহ্ছানিয়া মিশন, আপন, মুক্তি, প্রমিসেস, রিলাইফ, ক্রীড়া, সেফ হোম, বিকন, আমার হোম, ঘেরা, বারাকা, ইয়ুথ ফাস্ট ও প্রয়াসসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠান।’
ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ প্রসঙ্গ
পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগ ছাত্রদলের ওপর হামলা করেছে বলে মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘এগুলো হলো রাজনৈতিক কৌশল। অনেকেই অনেকভাবে এ ধরনের প্রচারণা করেন। আমি বলব, প্রচারণার জন্যই তারা এগুলো বলেন। এগুলোর অনেক কিছুর মধ্যেই সত্যতা নেই।’
ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি স্বাধীন দেশ। এখানে বহুদলীয় রাজনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে রাজনীতির অঙ্গন সব সময়ই উন্মুক্ত। কিন্তু যারা আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, ভাঙচুর করে, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়, মানে যান চলাচল বন্ধ করে কিংবা মানুষের যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, মালপত্র বা জানমালকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়, তখনই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে হস্তক্ষেপ করে।
‘না হলে তারা মিটিং করছে, মানববন্ধন করছে, রাজনৈতিকভাবে যেগুলো করণীয়, তারা সেগুলো করছে। আমরা মনে করি, এটা তাদের অধিকার। সেগুলো তারা করছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। একটি রাজনৈতিক দল তার রাজনীতির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে, এগিয়ে যাবে- এটিই আমাদের কাম্য।’