বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃষ্টিতে ধান পানির নিচে, বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি

  •    
  • ২৪ মে, ২০২২ ১০:৪৩

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কৃষি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পূবালী বায়ু চাপের কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এপ্রিল ও মে মাসে সর্বাধিক ৯৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি জুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।’

কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে জেলার নিম্নাঞ্চলের শত শত একর বোরো ধানসহ সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট। তাই পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকের।

জেলায় কৃষিতে ৪১২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় জেলা কৃষি বিভাগ।

যে কারণে শ্রমিকের সংকট

প্রতি বছর মৌসুমের ধান কাটার জন্য কুড়িগ্রামের শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একসঙ্গে সবাই ধান কাটায় ব্যস্ত। এ কারণে শ্রমিক সংকট আরও বেশি।

অনেক চাষি তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজেরাই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। কিছু পুরুষ শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের মজুরি বেশি। তাই অনেকেই নারী শ্রমিক দিয়েও ধান মাড়াই করছেন।

ধান কাটতে পুরুষ শ্রমিকরা নিচ্ছেন বিঘাপ্রতি দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর নারী শ্রমিকরা প্রতি এক হাজার ধানের আঁটি মাড়াই করতে নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কী বলছেন চাষিরা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে লোকসানের পাল্লাটা আরও ভারী হচ্ছে বোরো চাষিদের।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সুভার কুটি গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে নিজেরাই ধান কেটে নারী শ্রমিক দিয়ে আঁটি ডাঙ্গায় নিতে হচ্ছে। এতে খরচও বেশি হচ্ছে।

পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুল বাজারের পানাতিপাড়া গ্রামের চাষি শ্রী অমিদাস বলেন, ‘প্রায় ৫৫ হাজার টাকার একটি গরু বিক্রি করে ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করছি। কিন্তু অকাল বৃষ্টিতে এক বিঘার ওপর ধান তলায় গেছে। শ্রমিক সংকটের ওপর যে দুই-একজন শ্রমিক পাওয়া যায়, তাদের মজুরিও বেশি। তাই সন্তানরা নিজেরাই ধান কাটছে।’

একই এলাকার ছড়ার পাড় গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আধাপাকা ধান কাটছি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই ফসলের ১৬ আনার মধ্যে ৪ আনা পাওয়া যাবে। এতে আবাদের খরচ উঠবে না। এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক নেয় ২০০০ হাজার থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার আবাদের পুরোটাই লস।’

শ্রমিকসংকটের কথা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তরের শ্রমিকরা চলে গেছে। এত বোরো মৌসুমে শ্রমিকসংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।’

যা বলছে কৃষি বিভাগ

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে হাইব্রিড-৫৩ হাজার হেক্টর, উপশি-৬১ হাজার ৮৯০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত- এক হাজার ২৩০ হেক্টর।

চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৩ টন। এর মধ্যে হাইব্রিড দুই লাখ ৬৫ হাজার টন, উপশি দুই লাখ ৫০ হাজার ৬৫৪ টন এবং স্থানীয় জাতে দুই হাজার ১৮৯ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

গত দুই মাসের বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষিতে ৪১২ হেক্টর ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে বোরো ধান ২৬৫ হেক্টর, পাট ৯৫ হেক্টর, শাকসবজি ১২ হেক্টর, তিল ১০ হেক্টরসহ অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি টাকার অঙ্কে কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮৩ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। রোদ না থাকায় কৃষকদের একটু সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কৃষি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুর সবুর মিয়া বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পূবালী বায়ু চাপের কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এপ্রিল ও মে মাসে সর্বাধিক ৯৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি জুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।

‘চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৭২ মিলিমিটার। এ ছাড়া ২৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫১৮ মিলিমিটার।’

এ বিভাগের আরো খবর