অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ সোমবার বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে চার জনকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদেরও অনুমতি দিয়েছেন বিচারক।
চার অভিযুক্ত হলেন- এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান এবং মোহাম্মদ শাজাহান।
দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে এ আদালতে তাদের হাজির করা হয়। পৌনে ৪টায় তাদের এজলাসে তোলা হয়। শুনানি চলে পৌনে এক ঘণ্টা।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের পক্ষে কোনো জামিন আবেদন না করে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন নামঞ্জুরের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তারা কারাগারে চার জনের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা চান।
দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এই চার জন উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন আগাম জামিনের জন্য। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে উচ্চ আদালত তাদের সে আবেদন নামঞ্জুর করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্নসাত করেছেন। নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ তারা হাসিল করেছেন। মামলায় আসামির তালিকায় আরও দুই জনের নাম রয়েছে। তারা এখন পলাতক।’
আসামিপক্ষে বলা হয়, ‘শুধু অনুমানের ভিত্তিতে এ মামলা করা হয়েছে। অনুমানের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং মামলা হয় না। আর দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা হচ্ছে সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ। এখানে কোনো অভিযুক্তই সরকারি কর্মচারী নন। বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আর তাছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তারা বয়সে প্রবীণ ও বৃদ্ধ।’
এর আগে রোববার চার ট্রাস্টি আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে দেয়।
সেইসঙ্গে শাহবাগ থানাকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়।
গত ৫ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকায় তার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- নর্থ-সাউথের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সুপারিশ বা অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের কিছু সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির মাধ্যমে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৬.৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন আসামিরা।
পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকজনের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন তারা। সে এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।