বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে জিজ্ঞাসাবাদের নামে যাত্রী হয়রানি না করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন শেষে সোমবার দুপুরে বিমান প্রতিমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, ‘এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে সন্দেহ হলে শুধু তাকেই চেক করুন। আমাদের প্রতিদিন ২১ হাজারের মতো যাত্রীর আসা-যাওয়া। সবাইকে যদি চেকের সম্মুখীন হতে হয় তবে এটা যাত্রী সেবার অনুকূল হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। প্রত্যেক যাত্রীকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা না হয়, হয়রানি না করা হয়। যাদের তারা প্রয়োজন মনে করবেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। প্রয়োজনে তাদের আলাদা করে জিজ্ঞাসা করবেন। এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্যই আজকে আসা।’
‘কাস্টমসের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, যাতে সব যাত্রীর ব্যাগ চেক করা না হয়। কেবল তথ্যের ভিত্তিতে যাকে সন্দেহ হবে তাকে চেক করা হবে। ১ থেকে ২ শতাংশ যাত্রীকে আলাদাভাবে নিয়ে চেক করতে হবে।’
চেক করতে গিয়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়ায় যাতে কোনো হয়রানি না হয় সে বিষয়েও জোর দেন তিনি। বলেন, ‘এয়ারপোর্টে এসে সেবা নির্বিঘ্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে। শিগগির যাতে ই-গেট চালু হয় সেটির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
হজ ফ্লাইট প্রসঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করার প্রস্তুতি আছে। কিন্তু হজে যারা যাবেন বাড়ি ভাড়া এবং মোয়াল্লেম নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো করতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়গুলো এখনও ক্লিয়ার হয়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস নির্দিষ্ট সময়ে কাজগুলো শেষ করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়গুলো দেখছে। আমাদের বিশ্বাস এই সময়ের মধ্যে সব হয়ে যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ৩১ মে হজ ফ্লাইট উদ্বোধন করা হবে।’
হজ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সিডিউল ফ্লাইট বিঘ্ন হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের বহরে ২১টির মধ্যে চারটি বোয়িং-৭৭৭। ২০১৯ সালে এই চারটি দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল। এ বছরও সেটি করা হবে। এতে বিমানের অন্যান্য গন্তব্যের সিডিউল ফ্লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি আমরা কমিয়ে দেব। কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম লাভজনক রুটের ফ্রিকোয়েন্সি কমানো হবে। এটা দুই মাসের বিষয়। সিডিউল ফ্লাইটে কোনো ব্যাঘাত হবে না।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি কমানো হবে না বলে জানান তিনি।
মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা দল করা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন মন্ত্রণালয়ের লোকজন বিমানবন্দরে থাকেন। কোনো অব্যবস্থাপনা হয় কি না তারা দেখেন। আমরা এখানে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সেবার মান ভালো। ইমিগ্রেশনে তাদের কোনো সমস্যা নেই।’
বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে যার যারা ডিউটি করেন তাদের নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে ঢুকতে হবে। ডিউটি শেষে বের হতে হবে। যাতে আমরা যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে পারি। বহির্বিশ্বে বিমানবন্দরগুলোতে যেমন সেবা দেয়া হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।’
বিমানবন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব ব্যবস্থাপনা যে সম্পূর্ণভাবে করতে পারছি তা বলি না, আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন অসুবিধার কারণে আমরা যথাযথ সেবা দিতে পারছি না। সেজন্য তৎপর আমরা। কিছু কিছু অব্যবস্থাপনা যাত্রীদের হচ্ছে না, এটা আমরা বলতে পারব না।’
বিমানবন্দরের ক্যানপিতে লোহার বাধার কারণে যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে বের হতে কষ্ট হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘এখানে ব্যারিকেড উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে যখন ট্রলির সংকট হলো তখন আবার ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। কারণ অনেক ট্রলি বিমানবন্দরের বাইরে চলে যেত। ট্রলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটা আমাদের করতে হয়েছে। হুইল চেয়ার যাতে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা যায় সেটি দেখা হবে।’
মাঙ্কিপক্স বিষয়ে বিমানবন্দরে সতর্কতা ও যাত্রী স্ক্যানিংয়ের বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি। দেশে এলে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম অনলাইনে দিতে হয়। সেখানে এ পয়েন্টটি দেয়া হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের উপসর্গ আছে কি না, যেসব দেশে মাঙ্কিপক্স বাড়ছে সেসব দেশ থেকে আসছে কি না সেসব তথ্য পাওয়া যাবে।’