চলতি বছরের হজযাত্রা ঝামেলাহীন করতে ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সম্প্রতি হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত পর্যালোচনায় এক সভা থেকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।
এটি ছাড়াও সভায় আরও আটটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ হজসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবকে সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সভায় বিমানকে ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি হজযাত্রী পরিবহনে সম্ভাব্য সব ফ্লাইট ডেডিকেটেড হতে হবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়।
হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইনসকে রুট-টু-মক্কা ইনিশিয়েটিভের বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, হজযাত্রীদের সব ইমিগ্রেশন হজ ক্যাম্পেই করতে হবে। এ লক্ষ্যে হজ ক্যাম্পে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বুথ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে বিমানবন্দরে দুটি বুথ স্থাপন করতে হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, সুষ্ঠুভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম সরবরাহ করতে হবে। হজযাত্রীদের আরটি-পিসিআর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল নির্ধারণসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হজযাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকা নেয়া সংক্রান্ত সুরক্ষা অ্যাপে থাকা তথ্যপ্রাপ্তি হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যথাযথ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও রয়েছে, হজযাত্রীদের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে হজ ক্যাম্পে সব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সার্বক্ষণিক সেবাদান কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে হজ ক্যাম্পে যাতায়াতের রাস্তা সচল ও বাধাহীন রাখতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২০২২ সালের হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থা কর্তৃক নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের হজ ফ্লাইট। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বের ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সর্বনিম্নটি হলো ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব)।
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক বহন করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে বিগত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।