প্রাকৃতিক কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে লিচু আগেভাগেই পেকে যায়। ফলনও হয় ভালো। একই সঙ্গে দামও ভালো পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যাপকহারে লিচু চাষে ঝুঁকছেন এ জেলার চাষিরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিটি লিচুগাছেই ঝুলতে দেখা গেছে পাকা পাকা লিচু। সেই লিচুগাছ থেকে পেরে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এ বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫০ টন। এর বতর্মান বাজারমূল্য ৩২ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুরে আগে লিচু ওঠা, খেতে মিষ্টি ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার লিচু ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন এখানকার বাগানগুলোতে।
জেলায় বেশ কয়েকটি জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। যার মধ্যে মোজাফফর, বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচুর চাষ বেশি করা হয়।মেহেরপুরের উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৭০ ভাগই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। আগে পাকার কারণে এ জেলার লিচুর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
তাই জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই লিচুগাছ থেকে ভাঙতে, ক্যারেট সাজাতে, বাগান পাহারাসহ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করেন শ্রমিক ও বাগান মালিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের লিচু ব্যবসায়ী করীম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর ধরে মেহেরপুরে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচু আগেই পাকার কারণে আগে থেকেই বাগান কিনে রাখি। সেই লিচু ভেঙে ঢাকায় বিক্রি করে লাভ ভালোই হয়।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার লিচু চাষি শাহজাহান আলী জানান, তার প্রায় ৪০টি লিচুর বাগান আছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাগানে শতাধিক গাছ আছে। লিচু ভাঙার সময় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শ্রমিক লাগে। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয় তাদের।
লিচু বাছাই করতে আসা শ্রমিক শামীম বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু লিচু বাছাইয়ের কাজে এসেছি। সকালে আসি বিকেলে বাড়ি যাই। লিচু বাছা তেমন ভারী কাজ না হলেও মজুরি ভালো পাওয়া যায় এ কাজে।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণেই এ অঞ্চলের লিচু দেশের অন্য জেলার তুলনায় আগে পাকে। এ বছর জেলায় লিচুর ফলনও ভালো। তাই মৌসুমের শুরুতে সারা দেশে মেহেরপুরের লিচুই বাজারে বেশি পাওয়া যায়।’