বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ‘টুস’ করে ফেলে দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘হত্যার হুমকিস্বরূপ’ এবং ‘কুরুচিপূর্ণ’ দাবি করে বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রধানমন্ত্রীকে ভাষা শালীন করার আহ্বানসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রয়া দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সন্ধ্যায় ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদে টিএসসিতে জড়ো হন একদল ছাত্রলীগ কর্মী।
সেখানে তারা আগে থেকেই অবস্থান করা ছাত্রদল কর্মী আতিক মোর্শেদকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। পরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা হল থেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্পসহ লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন দেয়।
এ সময় তারা ‘ছাত্রদলের গুণ্ডারা, হুশিয়ার,সাবধান, একটা একটা ছাত্রদল ধর, ধরে ধরে জবাই কর, হই হই রই রই, ছাত্রদল গেলি কই’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
সকালের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক জুয়েল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্যই আপনি ওয়ান ইলেভেনে বাংলার মাটিতে ফিরে এসে রাজনীতি করতে পেরেছেন। সেই দেশনেত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করতে আপনার বিবেকে নিশ্চয়ই লাগবে না। কারণ আপনি বিবেক বিবর্জিত একজন মানুষ। কত রক্ত চাই আপনার? ছাত্রদল রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আমাদের আবেগ, আমাদের আদর্শিক মা বেগম জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করার চেষ্টা করবেন না।’
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীদের চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের যদি রাজনৈতিক সক্ষমতা থাকে তাহলে প্রশাসন ভাইদের নিরপেক্ষ রেখে একবার যুদ্ধের মাঠে আসুন। সেই যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাত্রদলের রয়েছে। সেই যুদ্ধ হবে গণমানুষের পক্ষের যুদ্ধ।’
সন্ধ্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানছুরা আলম বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে আমরা কয়েকজন টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। বাকি লোকজনও আশেপাশে ছিলে। এ সময় ছাত্রদল কর্মী আতিক মোর্শেদকে একা পেয়ে জসিম উদ্দিন ও মুহসিন হলের কর্মীরা তার উপর অতর্কিত হামলা করে।
‘পরে আমি তাকে বাঁচাতে যাই। এ সময় আতিককে তারা কিল, ঘুষি এবং হেলমেট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে আমরা সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে পালিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আতিক মোর্শেদকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করার জন্য জরুরি বিভাগে আসছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আমাদের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানের নেতৃত্বে জসিম উদ্দীন হল এবং মুহসিন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্ট্যাম্প, রড এবং হেলমেট দিয়ে আমাদের কয়েকজনের উপর আঘাত করে। এদের মধ্যে আতিক মোর্শেদের আঘাত গুরুতর।’
আর কারা আহত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি পরে জানানো হবে বলে জানান।
ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের অনিরাপত্তা বোধ রয়েছে যে, তাদের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত থাকবে কি না।’
তিনি বলেন, ‘যে ভাষায় ছাত্রদল রাজনীতি করে আমরা মনে করি এটি তাদের এইট পাশ প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্টারমিডিয়েট পাশ না করা বর্তমান কো-ভাইস চেয়ারম্যানের উপযুক্ত বক্তব্যই তাদের অশ্লীল অশ্রাব্য বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ করে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই।’