বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্কুলে একাকার গোয়ালঘর পড়ার ঘর

  •    
  • ২২ মে, ২০২২ ২১:১৮

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চুয়াডাঙ্গায় মোট ১৩৯টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্ত ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সরকার।

পাশেই গোয়ালঘর। গরুর মূত্র আর গোবরের গন্ধে ভেসে যাচ্ছে শ্রেণিকক্ষ। আর ফ্যান না থাকায় তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ঘর্মাক্ত শিশু শিক্ষার্থীদের। তবু তারা এখানে পড়তে আসে নিয়মিত।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি বকচরপাড়ায় অবস্থিত একটি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। তবে শুধু এই স্কুলই নয়, এ জেলায় এমনও কিছু উপানুষ্ঠানিক স্কুল রয়েছে যার মাথার ওপর নেই কোনো ছাদ। ওপরে তাকালে দেখা যায় নীল আকাশ। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে থইথই করে পানি। শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদানের বিষয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।

সরেজমিন জেলার কয়েকটি উপানুষ্ঠানিক স্কুল ঘুরে এসব অনিয়ম দেখা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ‘আউট অফ স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলায় মোট ১৩৯টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করছে ৬৯টি আর সৃষ্টি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে রয়েছে ৭০টি বিদ্যালয়।

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চুয়াডাঙ্গায় এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস হয় ছয় মাস করে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয় বছরজুড়েই। এখানে লেখাপড়া করে সমাজের ঝরেপড়া শিশুরা। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে ১২০ টাকা করে বৃত্তিও দেয়া হয়। এ ছাড়া তারা খাতা, কলম, পেনসিল, আর্ট পেনসিল, রাবার, শার্পনার, বক্সসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে পায়।

এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য শুরুতেই ভাড়া নেয়া হয় ঘর। এর সমস্ত ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ। কিন্তু সরকারিভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও নানা অনিয়মের মধ্য দিয়েই চলছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান প্রক্রিয়া।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি বকচরপাড়ার গোয়ালঘরসংলগ্ন ও ফ্যানবিহীন সেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন রাফিয়া খাতুন। সুপারভাইজারের দায়িত্বে আনিছুর রহমান।

সুপারভাইজার বলেন, ‘ঘর ভাড়া নেয়ার সময় আমি ছিলাম না। ঘর পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। ফ্যানের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

জরাজীর্ণ এমন অসংখ্য ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যক্রম

পৌর এলাকারই নুরনগর পুকুরপাড়ায় আরেকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও পাঠদানের জন্য নির্ধারিত ঘরটির বেহাল। ঘরের টিন ভেদ করে আকাশ দেখা যায়। তাই ঝড়-বৃষ্টিতে এ বিদ্যালয়টিতে অবস্থান নেয়াও কঠিন ব্যাপার। সেখানে শিক্ষক হিসেবে আছেন বেলি আক্তার। আর সুপারভাইজার শারমিন খাতুন।

শিক্ষক বেলি আক্তারের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা অভিযোগ। এর মধ্যে প্রধান অভিযোগই হলো- বেলি আক্তার ঠিকমতো ক্লাস করান না। বিদ্যালয়ে আসেন দেরিতে। আর বিনা মূল্যে ভর্তির ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ক্লাস শেষে ওই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে বেলি আক্তার প্রাইভেট পড়ান বলেও জানা গেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বেলি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাই। প্রতিদিন সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হই।’

এ বিষয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আউট অফ স্কুল চিলড্রেন এডুকেশনের জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবীর বলেন, ‘কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। বেলগাছির বিদ্যালয়টি গোয়ালঘরের পাশে সেটা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি খোঁজ নেব। প্রয়োজন হলে ঘর পরিবর্তন করা হবে। অন্য অভিযোগগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর