কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বোরো ফসল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ। দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিকের সংকট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ, মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাউবোর বেলা ৩টার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বৃদ্ধি পাওয়া পানি নদী ও খাল-বিল দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকছে ফসলি হাওরগুলোতে। রোববার বিকেল নাগাদ উপজেলার মেদির বিল, সোনাডুবি, মহিষাসুরা, চানপুর, খাসপাড়া ও নাগডড়া হাওরের বিস্তীর্ণ জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান, ‘আমাদের হিসাবে এ পর্যন্ত ৫০০ একর বোরো জমি নিমজ্জিত হয়েছে। তবে এসব জমির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।’ তবে কৃষকরা দাবি করেছেন, নিমজ্জিত হওয়া জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তা ছাড়া কিছু কিছু এলাকার ৫০ ভাগ ধান এখনও কাটা হয়নি।
কৃষিবিদ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পানি ও বৃষ্টির কারণে কোনো কোনো কৃষকের ধানের রং নষ্ট হয়ে গেছে। এটির দাম কম পাওয়ার কারণ হতে পারে।’তিনি আরও বলেন, ধান কাটা-মাড়াইয়ের জন্য উপজেলায় পর্যাপ্ত কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি ও রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় মেশিনগুলো আনা-নেয়া করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ধানকাটা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
বিশরপাশা গ্রামের কৃষক তপন সাহা বলেন, ‘আমার দুই একর ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছি না। যেটুকু কেটেছি তা-ও শুকাতে পারছি না রোদের অভাবে।’ এই কৃষক আরও বলেন, ‘একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ জমি নিমজ্জিত হওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।’
অনেক এলাকায় কৃষক ও শ্রমিকদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদেরও ধান কাটতে দেখা গেছে।
আবুল কালাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘অনেক কষ্টে ৫৬ শতক জমির ধান কেটে বাড়িতে এনেছি। বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় কিছু ধানে চারা গজিয়ে গেছে।’
অনেকের হাওরে থাকা ধানের খড়ের পুঞ্জিও তলিয়ে গেছে, যা গবাদিপশুর খাদ্য সংকটের কারণ হবে, জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ৮টি ইউনিয়নের ১৬৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।