স্বাধীনতার পর ৪৬ বছরে দেশে কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ সময় দেশ থেকে কমপক্ষে আট লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের পেশাদার অর্থনীতিবিদদের সংগঠনের ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’। এই টাকা উদ্ধার করে তা দেশের জাতীয় বাজেটে খরচ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার রাজধানীর মগবাজারে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতি সমিতি ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছে। বর্তমান সরকারের চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। এই বিশাল বাজেটের জন্য কোন বিদেশী ঋণ নিতে হবে না। দেশীয় উৎস থেকেই পুরো বাজেট ব্যয় মেটানো সম্ভব।’
বাজেটে আয় সম্পর্কে বারকাত বলেন, ‘বাজেট অর্থনৈতিক হলেও এর আয়ের সমাধান অনেকটাই রাজনৈতিক। এ বিশাল বাজেটের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে এমন উৎসে হাত দিতে হবে যেখানে অতীতে হাত দেয়া হয়নি। এ উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদ কর, দেশের সম্পদ কর আইন আছে। অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর বসাতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যারা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে তাদের উপর কর বসানো হয়েছিল। বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর আদায় করা যায়। বিদ্যমান বিভিন্ন কর সর্বোচ্চ আহরণে জোর দিতে হবে। কালো টাকা ও পাচারকৃত টাকা থেকে উদ্ধারকৃত অর্থ বাজেটে ব্যয় করতে হবে।’
‘আমাদের কাছে ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ সাল পর্যন্ত ৪৬ বছরের বাংলাদেশের পুঞ্জিভূত কালো টাকার পরিমাণ ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। আমরা এই পুঞ্জিভূত কালো টাকা থেকে দুই শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। এতে এক লাখ ৭৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা উদ্ধার হবে।’
‘একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে হওয়া অর্থ পাচারের পরিমাণ কমপক্ষে ৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা তার ১০ শতাংশ উদ্ধার করে বাজেটে আনার কথা বলছি।
দুর্নীতি, কালোটাকা তথ্য পাচার বিষয়ে আমরা একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা বলছি। এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য কার্যপরিধি বিস্তারিত কিভাবে কি হবে তা আমরা সরকারকে ও জানিয়েছে।'
অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
মোট বাজেটের মধ্যে বিভিন্ন কর থেকে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আয় কথা বলা হয়েছে। এনবিআর আয় করবে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড এর বাহিরে কর আদায় হবে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।
অর্থনীতি সমিতি বিভিন্ন খাতের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরে।
আবুল বারকাত বলেন, ‘দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আগামী কয়েক বছর সব ধরনের কর থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। তাদেরকে কর নেটের বাইরে রাখতে হবে। শিশুদের খেলার মাঠ ভেঙ্গে যে যেভাবে পারে, যা খুশি, তা করে। এবং বহু শিশু বিকাশে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ গঠন করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সবকিছু ছোট্ট একটা শহর ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজের ধরন অনুসারে বিভাগওয়ারী নিয়ে যেতে হবে।’