কুষ্টিয়ার বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট ‘গুরুকুল’-এর শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নিজ কক্ষে ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে এমন কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, হাসপাতালে তাদের চলমান বাস্তব প্রশিক্ষণ (ইন্টার্নশিপ) বন্ধ করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে সেই সুযোগ দিয়েছেন ড. মোমেন।
গুরুকুল নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রমুখ (প্রধান) সুফী ফারুক ইবনে আবুবকর বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। সফলভাবে তিনটি ব্যাচ প্রশিক্ষণ শেষও করেছে। ইন্টার্নশিপে শিক্ষার্থীরা যেমন দক্ষ হয়ে ওঠে, তেমনি হাসপাতালে রোগীদের সেবার সুযোগ বাড়ে।’
সুফী ফারুকের অভিযোগ, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেন চার মাস আগে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নির সুযোগ বন্ধ করে দেন। পরে যোগাযোগ করলে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইন্টার্নির অনুমতি নিয়ে আসলে উনি সুযোগ দেবেন।
সুফী বলেন, ‘এমন নিয়ম না থাকার পরও শুধু তার কথা রাখতে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করি। সেই আবেদন প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু গত ১৮ মে হঠাৎ তিনি কুষ্টিয়ার অন্য দুটি বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে ইন্টার্নশিপের অনুমতি দিয়েছেন। গুরুকুলের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি যে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণ বা ইন্টার্নশিপের অনুমতি নেই।’
সুফি ফারুক আরও অভিযোগ করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গুরুকুলের স্টুডেন্ট গভর্নর লাবনি খাতুন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ইন্টার্নশিপের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৩০ হাজার করে টাকা দাবি করেন ড. মোমেন। এটা দিতে পারলে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়াই ইন্টার্নির সুযোগ করে দেবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ধরনের কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে জেনে তারা নার্সিং পড়তে আসেননি। আর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই এই পরিমাণ টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই।
কুষ্টিয়ার সবগুলো বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী আছে। এদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিলে টাকার পরিমাণ হয় বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, বিগত সময়ে এই চর্চা না থাকলেও নতুন একটি চক্র বিপুল পরিমাণ অর্থ জোরজুলুম করেন গরিব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্ত করেছে।
এসবের প্রতিবাদ জানাতেই শনিবার বেলা ১১টা থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. মোমেনের অফিস অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তত্ত্বাবধায়কের অফিসের সামনের করিডরে বসে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগের মতো ইন্টার্নশিপের সুযোগ না দেয়া পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান ধর্মঘট চলবে। পরে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ পাহারায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন তত্ত্বাবধায়ক।
গুরুকুল নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রমুখ (প্রধান) সুফী ফারুক বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফকে অবহিত করা হচ্ছে। তার পরও কোনো সুরাহা না হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন এবং ধারাবাহিক কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মোমেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। টানা দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পরও তার ফোন ধারাবাহিকভাবে ব্যস্ত পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ড. মোমেন সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে আগ্রহী নন।
এ অবস্থায় ড. মোমেনকে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।