সিলেটে সুরমা নদীর পানি কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। ফলে নগরসহ আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
নগরে পানি কিছুটা কমলেও কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।
এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ এড়াতে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্র ও শনিবার নগরের প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে দেখা যায়।
নগরের শামিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোদি দোকানি তোফায়েল আহমদ শনিবার পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসায় পানি, দোকানেও পানি। এদিকে গ্যাস, বিদ্যুৎ নেই, খাবার পানি নেই। এভাবে কয় দিন টেকা যায়।
‘ব্যবসা বন্ধ, অথচ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। পানিও কিনে খেতে হচ্ছে। তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। পানি কমলে আসব।’
শুক্রবার হবিগঞ্জে নিজের গ্রামের বাড়িতে গেছেন উপশহর এলাকার বাসিন্দা ফজলু আহমদ। তিনি বলেন, ‘চাকরির কারণে এত দিন বাড়ি যেতে পারিনি। নতুবা এই দুর্বিষহ অবস্থায় এক দিনও থাকার মতো না। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়া কিভাবে থাকা যায়? তার ওপর ঘরে পানি।’
তিনি বলেন, ‘রোববারও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। রোববারের পর সিলেট ফিরব।’
বন্যার পানি উঠেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়ও। এসব এলাকায় মেস করে থাকেন হাজারও শিক্ষার্থী। মেসে পানি উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। মেস ছেড়ে তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
আখালিয়া এলাকার তপোবন আবাসিক এলাকার একটি মেসে থাকেন শাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এমরুজ হাসান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘরে পানি উঠে বইপত্রও ভিজে যাচ্ছে। পানির কারণে ভার্সিটিতে যেতে পারছি না। বুয়াও আসছে না। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। আমার মেসের সবাই বাড়ি চলে গেছে।’
এদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক ও শ্রেণিকক্ষে পানি উঠে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবারের মতো শনিবারও সুরমার পানি কমা অব্যাহত আছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের দিনের চাইতে কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে।
পানি উঠে গেছে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে। এই বাজারের ব্যবসায়ী সুমন পাল বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে বাজারে পানি উঠতে শুরু করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে দোকানপাটও তলিয়ে যাবে।’
এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে সুরমা ও কুশিয়ারার এই উৎসস্থলের একটি বাঁধ ঢলে ভেঙে যায়। ফলে ওই উপজেলার বারোঠাকুরি, কসকনকপুর, কাজলশাহ সুলতানপুর ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনও নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’