মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংখ্যায় শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি ‘চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ নামে পরিচিত হবে। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে ইতোমধ্যে মানববন্ধনও করেছে চাকরিপ্রার্থীরা।
জানতে চাইলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ফোরামের সভাপতি এম এ আলম বলেন, ‘এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মহোদয় বলেছিলেন মার্চেই চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এখনও তা করা হলো না। এ জন্য আমরা ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছি ও স্মারকলিপি দিয়েছি। শিগগিরই চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই মাস আগে বেসরকারি স্কুল-কলেজে শূন্য পদের তালিকা চেয়ে জেলাপ্রশাসক বরাবর চিঠি দেয় এনটিআরসিএ। কিন্তু হঠাৎ করে আবারও তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে সব শিক্ষক যোগদান করেননি, সেখানে আবার সুপারিশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ পিছিয়ে যায়। এ ছাড়া এবার ই-রিকুইজিশন এর মাধ্যমে শূন্য পদের তালিকা আনার সিদ্ধান্তও চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্বের অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনেক প্রতিষ্ঠান ভূল চাহিদা দেয়ায় সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে পারেনি। চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেন এ সমস্যা সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন করার উদ্যোগ নিয়েছি, যা শেষ হবে আগামী ৩১ মে। এর পর অনলাইনে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্য পদের তালিকা চাইব। এরপরই চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
কবে নাগাদ চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। তবে আমরা আশা করছি আগামী জুলাইয়ের মধ্যে চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান মার্চের শেষে ‘চতুর্থ গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ওই বিজ্ঞপ্তির আওতায় ফল প্রকাশ হয় গত বছরের ১৫ জুলাই। সেখান থেকে ৩৪ হাজার ৭৩ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় ২০ হাজার ৯৯৬ এবং সংরক্ষিত ২ হাজার ২০৭ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল।
গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় দুই দফায়। প্রথম দফায় প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন।
সশরীরে ক্লাস প্রথম চালু হয় মাধ্যমিক স্কুলে। এরপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবার পর সশরীরে ক্লাস শুরু হয় প্রাথমিকে।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয় গত ২১ জানুয়ারি। এ দফায় শিক্ষাঙ্গনে সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকে এক মাস।
২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। গত ২ মার্চ থেকে আবার শুরু হয় প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর প্রাক-প্রাথমিকে ক্লাস শুরু হয় ১৫ মার্চ।