বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।
এই সময়ে কর্মহীন জেলেদের সহায়তায় সরকারের চাল বিতারণে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৎস্যজীবীরা অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
এরই মধ্যে সাগর থেকে ফিরে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য বন্দর পিরোজপুরের পাড়েরহাটসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে নোঙর করেছে কয়েক শ মাছ ধরার ট্রলার।বছরজুড়ে ইলিশের আকালের মধ্যে নিষেধাজ্ঞায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলেসহ মৎস্যজীবীরা।
তীরে ফিরে হতাশ জেলেরা জানান, এ বছর কাঙ্খিত ইলিশ ধরা না পড়ায় অনেক জেলেই পেশা পরিবর্তনের চিন্তা করছেন।
নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার যে চাল বিতারণ করে তা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই জেলেদের।
পিরোজপুরে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫ হাজার ৪০০, এর মধ্যে সাগরের জেলে ৫ হাজার ৩৯৩ জন।পাড়েরহাট গ্রামের জেলে সুমন খা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাগরে আমরা মাসের পর মাস থাকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সরকারের বরাদ্দের চাল আমরা প্রকৃত জেলেরা পাই না।
‘এখানে অনেক অনিয়ম চলে। আমরা যদি প্রতিবাদ করি তাহলে ভাগের চালই পাবো না। আমাদের সঙ্গে অনেক জেলে আছে সাগরে যায়, চাল পায় অর্ধেকেরও কম জেলে। আমাদের দাবি, অনিয়ম দূর করে অবরোধের সময় সরকারের সহযোগিতা আরও বাড়ানো হোক।’
মঠবাড়িয়া এলাকার জেলে কাঞ্চন ইসলাম বলেন, ‘জেলায় যে পরিমাণ জেলে তার চেয়ে অনেক কম জেলে কার্ড। এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় নাকি সরকার জেলেদের চাল দেয়।
‘সত্যি বলতে এই চালগুলো পায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয় স্বজনরা। এটা শুধু এক জায়গায় না। প্রায় সবখানেই একই চিত্র। আমরা যারা সাগরের প্রকৃত জেলে তাদের নামের চাল বরাদ্দ হয় ঠিকই কিন্তু সেটা চলে যায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষের ঘরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন পর এই চাল পরিষদে বিতরণ করা হবে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি (প্রতিবেদককে) আসবেন। ইশারায় দেখিয়ে দিবো। এদের মধ্যে অনেকে আছে এলাকায় মুদি দোকানদার, ট্রলারের মালিক এবং চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয় স্বজন।’
পিরোজপুর জেলে কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইলিয়াস আকন জানান, খাদ্য সহায়তা বাড়ানোসহ আর্থিক সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মৎস্যজীবী ও তাদের সংগঠন জেলে কল্যাণ সমিতি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘যে সময়টায় বাংলাদেশে সাগরের জল সীমানায় অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার, ঠিক একই সময়ে শেষ হয় ভারতের নিষেধাজ্ঞা। ফলে বাংলাদেশের জেলেরা নিষেধাজ্ঞায় সময় মাছ না ধরতে পারলেও ভারতের জেলেরা ঠিকই ধরে নিয়ে যাচ্ছে দুই দেশেরই জল সীমানার মাছ। এতে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের জেলেরাই।’
এ ব্যাপারে জেলেদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করেন তিনি।
পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী জানান, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় নিবন্ধিত জেলেদের প্রত্যেককে দুই ধাপে মোট ৮৬ কেজি করে চাল দিয়ে সাহায্য করবে সরকার।