বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২ টন সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ি যাচ্ছিল ঢাকায়

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২১ মে, ২০২২ ০০:৪২

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা লিপটন সরদার জানান, এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। ভাতের মাড় ও আরও কয়েক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের এই জেল তৈরি করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ওই জেল চিংড়ির মাথায় পুশ করা হয়।

তিনটি ট্রাক ভরে ২ মেট্রিক টন সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ি যাচ্ছিল ঢাকায়। কিন্তু যাত্রার শুরুতেই চিংড়ির ওই চালানটিকে আটক করেছে র‌্যাব সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার রাতে যশোর শহরের বাহাদুরপুরে চিংড়িভর্তি ওই ট্রাকগুলো জব্দ করা হয়। পরে সেখানে মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চালানটি জব্দসহ আড়াই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এদিকে, তিন ট্রাক চিংড়ি জব্দের ঘটনায় যশোর শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করে জব্দ হওয়া চিংড়ি দেখার জন্য।

চিংড়ির শরীর থেকে জেল বের হতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘জীবনে প্রথম এমন দৃশ্য দেখলাম। এভাবে আমাদেরকে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। সরকারের উচিত এমন জঘন্য কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।’

স্থানীয় চা দোকানি আলম হোসেন বলেন, ‘মানুষের জীবনের আর কোনো মূল্য নেই। এসব ভেজাল খেয়েই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা ভেজালমুক্ত দেশ চাই।’

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটি সম্পর্কে খবর পায় র‌্যাব-৬

অভিযানের বিষয়ে র‌্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, গোপনে তারা জানতে পারেন- খুলনার ডুমুরিয়া ফুলতলা শাহাপুর থেকে ৩টি ট্রাকে করে সিলিকন জেলযুক্ত চিংড়ির একটি চালান ঢাকার কারওয়ান বাজার ও আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছে। পরে এ নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাবের একটি চৌকস দল। এ অবস্থায় ট্রাকগুলো যশোর-মাগুরা মহাসড়কের বাহাদুরপুর আসলে আটক করে খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়।

মৎস অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬১ কার্টুনে দুই মেট্রিক টন চিংড়িতে সিলিকন জেলের উপস্থিতি শনাক্ত করেন; যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। পরে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে চিংড়ির মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে এবং জব্দ চিংড়ি মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নষ্ট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় বাজারে চিংড়ি সরবারহের জন্য অসাধু উপায়ে ওজন বৃদ্ধি করছে যা দণ্ডনীয় অপরাধ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবং র‌্যাব-৬ এর সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।’

এ সময় সিলিকন জেলের ভয়াবহতা সম্পর্কে লিপটন বলেন, ‘চিংড়ির দেহে যা পুশ করা হচ্ছে তাতে ক্রেতারা শুধু ওজনের দিক থেকে ঠকছেন তা নয়। এসব জেল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে বড় ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

সিলিকন জেলকে নীরব ঘাতক আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসব মাছ ব্যবসায়ী নীরব ঘাতকের ভূমিকা নিয়ে অগণিত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’

মৎস অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, এক কেজি চিংড়িতে ২৫০ গ্রাম জেল পুশ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে বিক্রেতা ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। ভাতের মাড় ও আরও কয়েক প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের এই জেল তৈরি করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে ওই জেল চিংড়ির মাথায় পুশ করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের এক মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চিংড়িগুলো নষ্ট করা হয়

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক আশেকুর রহমান জানান, চিংড়িতে ব্যবহৃত এই জেলটি মূলত সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর ক্ষত ঢাকতে ব্যবহার করা হয়; যা সিলিকন জেল নামে পরিচিত। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কেউ এগুলো কিনতে পারে। এসব জেল মানুষের চোখ, কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে।

আশেকুর বলেন, ‘এটা তো খাদ্য উপাদান নয়। পেটে গেলে গ্যাসের সমস্যাও হতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর