বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তরুণীকে হেনস্তাকারীদের পরিচয় টুকে নিয়েছিল পুলিশ

  •    
  • ২০ মে, ২০২২ ২১:২৪

মডেল থানা পুলিশের এএসআই ইকবালের কাছে হেনস্তাকারীদের তথ্য থাকার পরও কেন তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না- এ প্রশ্ন করা হলে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল বলেন, ‘থানা পুলিশ এ বিষয়ে আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি।’

নরসিংদী রেলস্টেশনে ‘অশালীন পোশাক’ পরার অভিযোগ তুলে তরুণীকে হেনস্তাকারীদের কাউকেই দুই দিনে শনাক্ত করেনি রেলওয়ে বা থানা পুলিশ। তবে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময়ই থানা পুলিশ গিয়ে তরুণী ও হেনস্তাকারী সবার নাম-ঠিকানা লিখে নিয়েছিল।

ফেসবুকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল হলে ও সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হলে ঘটনার দুই দিন পর শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছে জেলা প্রশাসন। হেনস্তায় জড়িতদের ধরতে রেল কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসেছে।

নরসিংদী জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে স্টেশনে যায়। তারা স্টেশন কর্তৃপক্ষ ও আশপাশের কয়েকজনকে ঘটনার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রতিনিধি দলের প্রধান জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামল চন্দ্র বাসাক বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদারক করছে। সিসিটিভির ফুটেজগুলো রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থা নিতে তৎপর জেলা প্রশাসন।’

নরসিংদী রেলওয়ে ফাঁড়ি ভৈরব রেলওয়ে থানার অধীন। হেনস্তাকারীদের শনাক্তের বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার বিষয়ে রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ আমাকে অবগত করেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেছি। তবে এ বিষয়ে ফাঁড়িতে এখনও পর্যন্ত কারও অভিযোগ আসেনি।

‘আমি সন্ধ্যায় রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছি। সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে বিবেচনা করে তরুণীকে হেনস্তাকারীদের ধরতে তৎপর আছি।’

হেনস্তাকারীদের খোঁজ পায়নি বলে দাবি করেছে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ।

রেলস্টেশন পরিদর্শনে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দল। ছবি: নিউজবাংলা

ওসি সাগাতুল আলম জানান, ঘটনার দিন ভোরে ৯৯৯-এ কল আসে। রেলস্টেশনে ‘তরুণ-তরুণী’দের হেনস্তা করা হচ্ছে এমন খবর দেয়া হয়। তখন মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থলে যান।

ওসি বলেন, ‘বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশের হওয়ায় তখন বিস্তারিত নেয়া হয়নি। আমরা এখন খোঁজখবর নিচ্ছি।’

যা ঘটেছিল

ফেসবুকে হেনস্তার ভিডিওটি ভাইরাল হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার স্টেশন ঘুরে কথা হয় দুই দোকানদার মো. আমিনুল ও ইখলাস উদ্দিন এবং ভাসমান পণ্য বিক্রেতা মো. মেহেদীর সঙ্গে। পুরো ঘটনা তারা দেখেছেন।

তারা নিউজবাংলাকে জানান, ভোরে ঢাকামুখী ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই দুই যুবক ও সেই তরুণী। হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ মেয়েটিকে দেখে বলে ওঠেন, ‘আপনার বাড়ি কই? কাল রাতেও এখানে আসছেন। আজকেও আসছেন। এসব পোশাক পরে কেউ স্টেশনে আসে নাকি?’

মেয়েটির সঙ্গে থাকা হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা তরুণ ওই বৃদ্ধকে তখন বলেন, ‘আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন? আপনি এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না।’

এ নিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে ওই যুবকের বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে আরেক নারী এসে মেয়েটির পোশাক নিয়ে কটাক্ষ ও গালমন্দ করতে থাকেন।

ততক্ষণে চারপাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে যায়। ওই বৃদ্ধ ও নারীর সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ হয়ে ওই তরুণী ও যুবককে গালমন্দ করতে থাকেন। ওই যুবকও তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে আরেক ব্যক্তি যুবককে ধাক্কা দেন। মেয়েটি তখন যুবককে নিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করলে ওই নারী মেয়েটিকে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন।

তরুণী ও সঙ্গে থাকা দুই যুবক সরে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই দোকানদার আরও জানান, তখনই ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন চলে আসায় ওই তরুণী ও সঙ্গে থাকা প্রতিবাদকারী যুবক তাতে উঠে চলে যান। সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটি মিনিট দশেকের।

তবে ভাসমান দোকানদার মেহেদী নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার সূত্রপাত এক নারীর কটাক্ষের জেরে হয়েছে।

তিনি জানান, ওই যুবক ও তরুণীকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ট্রেনে করে নরসিংদী নামতে দেখেছেন। বুধবার ভোরে তারা আবার ঢাকা যাওয়ার ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। সে সময় এক নারী মেয়েটির পোশাক নিয়ে প্রথম মন্তব্য করেন।

মেহেদী বলেন, ‘ওই নারী মেয়েটাকে বলতে থাকে যে এসব পোশাক পরে কেন ঘোরাঘুরি করছে, তার বাড়ি কই। ওই নারী মেয়েটার ভিডিও করতে নেয়। তখন মেয়েটার সঙ্গে থাকা একটা ছেলে প্রতিবাদ করতে থাকে। সে সময় কালো শার্ট পরা একটা লোক ওই ছেলেকে ধাক্কা দেয়। মেয়েটা তখন মোবাইল বের করে কাউকে কল করতে থাকে। এসবের মধ্যে ওই নারী মেয়েটার দিকে তেড়ে যায়।’

যা বলছে পুলিশ ও রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ

নরসিংদী মডেল থানার এএসআই ইকবাল হোসেন ঘটনার সময় ৯৯৯-এ কল পেয়ে সেখানে গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করে নিউজবাংলা।

তিনি জানান, ৯৯৯-এ কল দিয়েছিলেন একজন পুরুষ। তিনি রেলস্টেশনে ঝামেলা হচ্ছে জানিয়ে দ্রুত যেতে বলেন।

ইকবাল বলেন, ‘আমি কল পেয়ে যাই। মেয়েটিকে আর তার সঙ্গে থাকা আরেক যুবককে ট্রেনে তুলে দিই।’

ঘটনাস্থলে গিয়েও হেনস্তাকারীদের কেন ধরা হয়নি? জানতে চাইলে, ‘এখন ব্যস্ত আছি, কথা বলতে পারব না’- বলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

রেলস্টেশন ঘুরে জানা গেছে, ঘটনার সময় হট্টগোল শুনে এগিয়ে গিয়েছিলেন রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল এনামুল হক। তবে শুক্রবার গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়।

এনামুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি টহলে ছিলাম। ওই প্ল্যাটফর্মে হইচই হচ্ছে শুনে আমি এগিয়ে যাই। তখন দেখি মডেল থানার এএসআই ইকবাল সেখানে আছেন। আমি তার সঙ্গেই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঢুকি।

‘সেখানে ইকবাল স্যার হেনস্তার শিকার যুবক, তরুণী ও হেনস্তাকারী নারী ও পুরুষের নাম-পরিচয়, মোবাইল নাম্বার সবই লিখে নেন।’

এনামুল জানান, এরপর তিনি এবং এএসআই ইকবাল মেয়েটি ও তার সঙ্গে থাকা হলুদ টি-শার্ট পরা যুবককে ট্রেনে তুলে দেন।

হেনস্তার শিকার ও হেনস্তাকারীদের নাম-পরিচয় এএসআই ইকবাল টুকে রেখেছিলেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে ঘটনার আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।

রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদী শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে স্যারেরা এসেছেন। ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি স্যারও এসেছেন। তারা আমাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমরা মাঠে আছি। অভিযোগ না পেলেও স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছি।’

মডেল থানা পুলিশের এএসআই ইকবালের কাছে হেনস্তাকারীদের তথ্য থাকার পরও কেন তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না- এ প্রশ্ন করা হলে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল বলেন, ‘থানা পুলিশ এ বিষয়ে আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি।’

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই নিউজবাংলার প্রতিনিধিকে কল করে এএসআই ইকবাল নাম টুকে রাখার তথ্য অস্বীকার করেন।

হেনস্তার শিকার ওই তরুণী ও তার সঙ্গে থাকা যুবকদের পরিচয় জানা যায়নি বলে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ওই তরুণী, তার সঙ্গী বা তাদের পরিচিত কেউ ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য জানাতে বা কোনো তথ্য দিতে চাইলে +৮৮ ০৯৬০২১১১৮৭৪ নম্বরে কল দিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

এ বিভাগের আরো খবর